দুই নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাতায়াতের সময় শক্তিগড়ের ল্যাংচার স্বাদ চেখে দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে বার করা মুশকিল। সেই শক্তিগড়ে শুক্রবারের পর শনিবারও বাঁধল হুলুস্থুল। অস্বাস্থ্যকর ল্যাংচার বিরুদ্ধে অভিযান ঘিরে শনিবার শক্তিগড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। জাতীয় সড়কের পাশের দোকানের পর এদিন গ্রামের ভিতরে ল্যাংচার গুদামে হানা দেন খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা। সেখান থেকে প্রায় ৩ ক্যুইন্টাল অস্বাস্থ্যকর ল্যাংচা উদ্ধার করে মাটির নীচে পুঁতে দেন তাঁরা। এই ঘটনায় শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন - ডিম ভাত খেতে কলকাতা গেলে ইন্সুরেন্স করে বাড়ি থেকে বেরোবেন, পোস্টার পড়ল হুগলিতে
পড়তে থাকুন - অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলার হুমকি, গ্রেফতারির পরেও তেজ কমেনি জামালের
শুক্রবার শক্তিগড়ের একাধিক ল্যাংচার দোকানে হানা দিয়েছিলেন খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন অস্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি হচ্ছে ল্যাংচা। কয়েকটি দোকান বাদ দিলে বাকিদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কোনও হুঁশ নেই। এব্যাপারে দোকানের মালিকদের সতর্ক করেন তাঁরা। দোকানিরা যখন ভাবছেন আপাতত রেহাই পাওয়া গিয়েছে তখন শনিবার ফের সেখানে হাজির হন স্বাস্থ্য দফতর ও খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকরা। রাস্তার পাশে দোকান পেরিয়ে গ্রামে ল্যাংচার গুদামে পৌঁছে যান তাঁরা। সেখানে গিয়ে তাঁরা যা দেখেন তাতে ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বস্তা বস্তা ল্যাংচা ভেজে রাখা একটি ঘরে। গরমে ইতিমধ্যে তাতে পচন ধরেছে। তার মধ্যে কয়েকটি ল্যাংচা আবার সাদা ছত্রাকে ঢেকে গিয়েছে।
এদিন অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী ও ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিইবি) এএস চট্টোপাধ্যায়। এ দিন এই হানাদারিতে প্রতিনিধিরা দেখেন, অধিকাংশ দোকানের রান্নাঘর এখনও অস্বাস্থ্যকর। মিষ্টির কড়াইয়ে নেই ঢাকনা। কারিগরদের কোনও স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয় না। নেই সামান্য পরিচ্ছন্নতা বজায়ের চেষ্টা। কোথাও বা বিষাক্ত রং মেশানো হচ্ছে মিষ্টিতে।
অনেকগুলি দোকানের গুদামে হানা দিয়ে সাত-দশদিন আগে থেকে ভেজে রাখা, ছত্রাকে ভর্তি যাওয়া ল্যাংচা মেঝের উপর ডাঁই করে রাখা অবস্থায় দেখতে পান হানাদারি টিম। সরকারি আধিকারিকদের প্রাথমিক অনুমান, ২১ জুলাই তৃণমূলের সভা উপলক্ষ্যে ল্যাংচার ব্যাপক চাহিদা থাকে। তাই বাসি মিষ্টি ২১ জুলাই পুনরায় ভেজে, রসে ডুবিয়ে বিক্রি করবার পরিকল্পনা ছিল। পরীক্ষার জন্য কয়েকটি নমুনা রেখে বাকি প্রায় তিন কুইন্ট্যাল এই ধরণের ভাজা ল্যাংচা বাজেয়াপ্ত করে তা পরিবেশবান্ধব উপায়ে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে দেন আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন - শ্লীলতাহানির অভিযোগ ভুয়ো, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির রিপোর্ট প্রকাশ করে দাবি রাজভবনের
অস্বাস্থ্যকরভাবে ব্যবসা করার অভিযোগে সাত জন দোকানদারকে আইনি নোটিস ধরানো হয়েছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে শক্তিগড় থানায় ডায়েরি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, সমস্ত অসাধু দোকানদারদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হচ্ছে। তাঁদের প্রত্যেকের দশ লক্ষ টাকা অবধি জরিমানা ও সাত বছর পর্যন্ত হাজতবাস বা উভয়ই হতে পারে। এদিন ক্রেতাদের শক্তিগড়ে ল্যাংচা কেনার আগে যথেষ্ট সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।