জেরা করেই মিলেছে জয়নগর হত্যাকাণ্ডে নয়া মোড়। এই এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব সামলাতেন সৈফুদ্দিন লস্কর। কদিন ধরে তাঁর গতিবিধির উপর নজর রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। মূল চক্রী কে? রহস্যভেদ করতে রাজ্য পুলিশ তদন্তে নেমেছে। মসজিদে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন সৈফুদ্দিন। আচমকা গুলির শব্দ। সব শেষ।
জয়নগরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন লস্কর
জয়নগরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে খুনের ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। গোটা এলাকা এখনও থমথমে। পুলিশ এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতকে জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য তাদের হাতে এসেছে। একাধিক ক্লু পর্যন্ত মিলেছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে খুনের জন্য ১ লক্ষ টাকা সুপারি দেওয়া হয় বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে কে সেই সুপারি দিয়েছিল জানা যায়নি। খুনের আগে রেইকি করে দুষ্কৃতীরা। চারদিন ধরে রোজ নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। সেই তথ্য আগে থেকে ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে।
এই রেইকি করার পরই ফাঁকা আবহে গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সইফুদ্দিন লস্করকে। জয়নগরের বামনগাছিতে সইফুদ্দিনের প্রাসাদোপম বাড়ি আছে। সেখান থেকে একটু দূরেই সম্প্রতি থাকতে শুরু করে ডায়মন্ডহারবারের এক যুবক। সোমবারই সেই যুবক শাহরুল শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর তাকে জেরা করেই মিলেছে জয়নগর হত্যাকাণ্ডে নয়া মোড়। এই এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব সামলাতেন সৈফুদ্দিন লস্কর। কদিন ধরে তাঁর গতিবিধির উপর নজর রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। মূল চক্রী কে? রহস্যভেদ করতে সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশ তদন্তে নেমেছে। মসজিদে নমাজ পড়তে যাচ্ছিলেন সৈফুদ্দিন। আচমকা গুলির শব্দ। সব শেষ।
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, শাহরুল চুরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। পুলিশের খাতায় তার নাম ছিল আগে থেকেই। তবে দর্জির কাজই মূলত করত। ডায়মন্ডহারবারের নেতড়ার বাসিন্দা ওই শাহরুলের উপর ভার ছিল সইফুদ্দিনের নজরদারির জন্য। পুলিশের কাছে জেরায় শাহরুল বলেছে, এটা ছিল তার কাছে নতুন কাজের বরাত। তাঁকে বলা হয়েছিল, চুরির কাজ হবে। তাই নজর রাখতে। রাজি হতেই মেলে বেশ কিছু নগদ টাকা। তখন সে চলে আসেন বামনগাছিতে। সোমবার তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে গুলি করে খুনের সময় এলাকায় ছিল শাহরুল। শাহরুলই খবর দেয় নমাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছেন সইফুদ্দিন। তার পরই ‘অপারেশন’ হয়।
অন্যদিকে এই খুনের পর পালানোর সময় দু’জনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে জনতা। তখনই সাহাবুদ্দিন লস্করকে গণপ্রহার করলে মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি জয়নগরের গোদাবর এলাকায়। সাহাবুদ্দিন দর্জির কাজ করত। শাহরুলও একই কাজ করত। সেই সূত্রেই দু’জনের পরিচয় ঘটে। এরপরেই জতুগৃহ হয়ে ওঠে জয়নগরের দলুইখাঁকি গ্রাম। একের পর এক বাড়িতে আগুন লেগেছে। এখনও এলাকায় চাপা উত্তেজনা আছে। পুলিশ ঘিরে রেখেছে গোটা গ্রামকেই। সইফুদ্দিন খুন, গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, গণপিটুনিতে একজনের মৃত্যু, ভাঙচুর—সব মিলিয়ে পুলিশ ৩টি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।