ঘটনাটি আত্মহত্যার। কিন্তু তার নেপথ্য কাহিনী ছিল। এই কথা বারবার দাবি করে আসছিল আত্মহত্যা করা যুবকের বাবা–মা। কিন্তু শুরু থেকেই তাঁদের কথা কেউ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিল না। এবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিতেই সন্তানহারা পিতা–মাতা ঘন অন্ধকারের মধ্যে একবিন্দু আলো দেখতে পাচ্ছেন। বালিতে ঘটেছিল ওই আত্মহত্যা। তা নিয়ে মামলা হতেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পুত্রহারা পরিবার যেন নতুন করে অক্সিজেন পেলেন। ওই বিষয়টি আবার কলকাতা হাইকোর্টে তোলার অনুমতি দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লাহ ও বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের নির্দেশ, পরিবারের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আবেদন জানালে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল? ২০২১ সালে হাওড়া জেলার বালিতে ঘটে এক আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু সেই আত্মহত্যার ঘটনার নেপথ্যে অভিযোগ ছিল, দাম্পত্য কলহের জেরে ওই যুবক (৩৫) আত্মঘাতী হয়েছেন। আর যখন ওই যুবক আত্মহত্যা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন থেকে আত্মহত্যা করা পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা ভিডিয়ো করে ওই যুবকের স্ত্রী বলে অভিযোগ। স্বামীকে বাঁচানোর বদলে স্ত্রী মোবাইলে স্বামীর আত্মহত্যার দৃশ্য ভিডিয়ো করেন। যা প্রকাশ্যে আসতেই নাগরিক সমাজ তোলপাড় হয়ে যায়। আমন সাউয়ের আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযুক্ত স্ত্রী নেহা শুক্লাকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই মামলা হারিয়ে যায়। এমনকী একমাস ১০ দিন জেল খেটে নেহা জামিন পেয়ে যায়।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এবার বৈঠক চান চাকরিহারারা, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাড়ছে চাপ
তারপর ঠিক কী ঘটল? এই ঘটনা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না আমন সাউয়ের বাবা মা। আর তাই চার বছর বাদে আবার ওই ‘কেস রিওপেন’ হয়েছে। ছেলের আত্মহত্যার সঠিক তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আমনের বাবা জগন্নাথ সাউ। আর তাই বালি থানার পুলিশের কাছে মামলার কেস ডায়েরি–সহ যাবতীয় নথি তলব করেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তবে তিন মাস কেটে গেলেও মামলা এগোচ্ছিল না বলে অভিযোগ আমনের বাবার। তাই সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়। তখনই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
আর কী জানা যাচ্ছে? এই নির্দেশের পরই ঘন অন্ধকারের মধ্যে একবিন্দু আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন আমনের মা–বাবা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আমনের বাবা জগন্নাথ সাউয়ের আইনজীবী জানান, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে আবার তদন্তের আবেদন করা হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে হাওড়ার মঙ্গলাহাটের বস্ত্র ব্যবসায়ী আমনের সঙ্গে লিলুয়ার বাসিন্দা নেহার বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরা পড়ে। এই আবহে হুগলি উত্তরপাড়ার এক যুবকের সঙ্গে নেহার পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়েই স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে অশান্তির সূত্রপাত। অবশেষে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে অশান্তি চরমে উঠলে আমন আত্মঘাতী হন।