গত কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। তারফলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে নদী। তারইমধ্যে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) লাগাতার জল ছাড়া অব্যাহত রেখেছে। তারফলে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অংশে। প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যকে না জানিয়েই ফের ছাড়া হল জল, আবারও সংঘাতে নবান্ন-ডিভিসি
সূত্রের খবর, প্রতিদিন প্রায় ৪৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ছে ডিভিসি। সেই জলের স্রোত গিয়ে পড়ছে কংসাবতী, শিলাবতী সহ একাধিক নদীতে। যার ফলে নদীগুলির জলস্তর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, দিন হোক বা রাত, নদী তীরবর্তী এলাকায় চলছে বিশেষ নজরদারি ও টহলদারি। সক্রিয় হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। জেলা শাসক খুরশিদ আলি কাদরি জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্লকে নতুন করে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। একজন মানুষও যেন কোনও অসুবিধায় না পড়েন, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত স্তরের আধিকারিকদের। প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রশাসনের চাপ। জুন মাসের মধ্যভাগ থেকেই বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, গড়ে প্রতিদিন ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তার উপর ডিভিসি থেকে নেমে আসছে প্রচুর জল। ফলে একাধিক নিচু এলাকায় জল ঢোকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘাটাল, গড়বেতা, কেশপুরের মতো ব্লকগুলিতে পরিস্থিতি বেশি চিন্তার। ইতিমধ্যেই জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় চারশো কিলোমিটার রাস্তা, সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি কাঁচা বাড়ি। ৩০ হাজারের বেশি ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে সব নজরে রাখছেন। বৃষ্টি কমলেই জল নামবে। ততক্ষণ প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করছে। ঘাটালের বিভিন্ন এলাকায় মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, জল ঢুকলে থাকতে হয় স্কুলে। সেখানে পরিকাঠামোর অভাব প্রকট। কেশপুরের বাসিন্দাদের বক্তব্য, গত বছর ভয়ঙ্কর বন্যা হয়েছিল। এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও আতঙ্ক রয়েইছে। ত্রাণ মিলছে, কিন্তু নির্দিষ্ট শিবির নেই। গড়বেতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে বলেন, নদীর জল বেশ বাড়ছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত গ্রামে জল ঢোকেনি। নজর রাখা হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে, ডিভিসি-র জলছাড় আর বৃষ্টির জোড়া চাপে জেলাজুড়ে সতর্কতা সর্বোচ্চ স্তরে।