নির্বাচনের মুখে দলের জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল নেত্রী। আর এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবার ‘সাম্মানিক’ অস্ত্র ব্যবহার করলেন ওই নেত্রী তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায়। তিনি প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, দলীয় বৈঠকে পরপর অনুপস্থিত থাকলে বন্ধ করে দেওয়া হবে জনপ্রতিনিধিদের সরকারি সাম্মানিক। আর এতেই চড়েছে রাজনৈতিক পারদ। এ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন বাঁকুড়ার ওই তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন: 'ভালো ছেলেদের মারল', নালিশ ঘাসফুলের, কোন্নগরে সমবায় ভোটে তৃণমূল-সিপিএম হাতাহাতি
সম্প্রতি শালতোড়ায় এক তৃণমূল কর্মিসভায় সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভা থেকে অনুসূয়া রায় বলেন, পঞ্চায়েতে টানা তিনটি বৈঠকে কেউ না এলে যেমন সাম্মানিক বন্ধ হয়, তেমনই দলের বৈঠকে পরপর গরহাজির থাকলে এবার তাঁদেরও সাম্মানিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকলে জনপ্রতিনিধির সরকারি সাম্মানিক বন্ধ করা কতটা সংবিধানসম্মত, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে বিজেপি সভাধিপতির বক্তব্যকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিজেপির এক নেতা এ বিষয়ে কটাক্ষ করে বলেন, বাংলায় সরকার আর দল এখন এক হয়ে গিয়েছে। দলের লোক কাজ করছে না, এটা বুঝেই ভয় দেখাতে হচ্ছে সাম্মানিক বন্ধের। সরকারের সাম্মানিক দল কীভাবে বন্ধ করবে? এটা সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী।
অন্যদিকে, তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের মতে, এই মন্তব্য হঠাৎ নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধিদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েই দলের অন্দরমহলে অসন্তোষ জমছিল। অনেক জনপ্রতিনিধি নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে হাজির থাকছেন না, অংশ নিচ্ছেন না প্রচারে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে সেই উদাসীনতাকে চাঙ্গা করতেই এমন বার্তা দিয়েছেন সভাধিপতি।
প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, পঞ্চায়েত আইনে বৈঠকে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকলে সাম্মানিক বন্ধের বিধান রয়েছে ঠিকই, কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতির ভিত্তিতে সরকারি ভাতা বন্ধ করার কোনও আইন নেই। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই হুঁশিয়ারি কি আইন লঙ্ঘনের শামিল নয়?
প্রসঙ্গত, দলীয় সংগঠন চাঙ্গা করতে গিয়ে তৃণমূলের জেলা স্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব এই মুহূর্তে যে কৌশল নিচ্ছে, তা আদৌ নির্বাচনের আগে লাভ এনে দেবে নাকি উল্টে ভিতরে ক্ষোভ বাড়াবে? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে রাজনৈতিক চত্বরে।