আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্য়ে 'ক্ষমা' চাইলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন! যা এক 'বিরল ঘটনা' বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। যদিও এই ঘটনায় একইসঙ্গে যাবতীয় দায় এড়িয়ে গেলেন তিনি!
একথা বলার কারণ হল, ইতিমধ্যেই একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই বিমান দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী রাশিয়ার বায়ু প্রতিরক্ষা বিভাগ। কিন্তু, পুতিন তাঁর 'ক্ষমা প্রার্থনা'য় সেই প্রসঙ্গে ভুলেও তোলেননি! তিনি কেবলমাত্র রুশ আকাশসীমায় ঘটনা এই ভয়ঙ্কর ঘটনাকে 'মর্মান্তিক দুর্ঘটনা' বলে উল্লেখ করেই দায় সেরেছেন।
ঠিক কী বলেছেন পুতিন?
ইতিমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে রাশিয়ার উপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু, তাতে যে ক্রেমলিন কোনও মতেই হার স্বীকার করতে রাজি নয়, তা পুতিনের মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
পুতিন সরাসরি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে তাঁরা ক্ষমা প্রার্থনার বুলি আউড়েছেন। তিনি একবারও উল্লেখ করেননি যে একের পর এক ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার প্রেক্ষাপটে রুশ বায়ু প্রতিরক্ষা বিভাগের মারাত্মক ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে ওই বিমানটিকে। উলটে তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে নিজেকে একজন সহমর্মী হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন!
যদিও ক্রেমলিনের তরফে এর আগে জানানো হয়েছিল, এই ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা রুজু করা হয়েছে এবং নাগরিক ও সেনা বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এদিকে, রবিবার থেকেই রাশিয়ায় বর্ষবরণের লম্বা ছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। তার আগে শেষ কাজের দিন ছিল শনিবার। ওই দিন ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারি তদন্ত সম্পূর্ণ না হলে তাদের পক্ষে ওই বিমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ, তারা সেটা বলার জায়গায় নেই!
অন্যদিকে, পুতিনের 'ক্ষমা প্রার্থনা'র পর আজারবাইজান প্রশাসনের তরফে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ পুতিনের বক্তব্যের একটি অংশ বিশেষ করে 'নোট' করেছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, 'রাশিয়ার আকাশসীমায় বহিরাগত বস্তুর দ্বারা এবং বহিরাগত প্রযুক্তির হস্তক্ষেপের ফলেই ওই বিমানটি সম্পূর্ণভাবে তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং পুনরায় কাজাখস্তানের আকটাউ শহরের দিকে ফিরে যায়।'
তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, আন্তর্জাতিকভাবে যতই তথ্যপ্রমাণ সামনে আসুক না কেন, পুতিন যে কোনও মতেই এই বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর দেশের বাহিনীর ভুল স্বীকার করতে রাজি নন, তা তাঁর এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তবে, একইসঙ্গে তিনি এটাও বুঝেছেন যে এই ঘটনার ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলের কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়বে। বিশেষ করে যেখানে আগে থেকেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অধিকাংশ শক্তিধর দেশ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এই অবস্থায় কিছুটা বাধ্য হয়ে এবং অনেকটা সতর্কভাবে আজারবাইজান বিমান দুর্ঘটনাকে স্রেফ 'মর্মান্তিক' বলেই দায় ঝাড়ার চেষ্টা করেছেন পুতিন। সেটাও আবার প্রকাশ্যে! যা তার ক্ষেত্রে আশা করাটাও বেশ কঠিন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
তাঁরা মনে করছেন, পুতিন তাঁর এই বক্তব্যের মাধ্যমে এটাও কঠোরভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, পরিস্থিতি যত প্রতিকূল হোক না কেন, তাঁর নেতৃত্বে থাকা রাশিয়া কখনই পশ্চিমের শক্তিগুলির কাছে মাথানত করবে না।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে যখন থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর আক্রমণ শুরু করেছে, তখন থেকেই পশ্চিমের অধিকাংশ দেশের বিমান সংস্থাগুলি রুশ আকাশসীমায় বিমান চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে, এই গোটা ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটে রাশিয়ার বন্ধু দেশ কাজাখস্তান।