দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের ক্ষমতা সম্প্রসারণের দাবিকে ‘অবৈধ’ বলার পাশাপাশি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বেজিংয়ের অবাধ আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টার কড়া সমালোচনা করল আমেরিকা। সেই সঙ্গে এ যাবৎ নিজের একঘরে করার নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে আসিয়ান শরিক জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির বিষয়ে আবার জোর দিল ওয়াশিংটন। দক্ষিণ চিন সাগরে ১২০টি যুদ্ধবিমান বহনকারী দুই মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ‘নিমিটজ’ ও ‘রোনাল্ড রেগান’-এর টহলদারির মাঝেই নিজের বিবৃতিতে ওই অঞ্চলে চিনের দখল কায়েম করার বিষয়ে আমেরিকার অবস্থান স্পষ্ট করলেন মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পিও। ভিয়েতনাম উপকূলের কাছে প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জে ঘাঁটি গাড়া দুই মার্কিন সুপার ক্যারিয়ার সোজাসুজি চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির নৌসেনার শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এর কাছাকাছি দক্ষিণ প্রান্তেই রয়েছে হাইনান দ্বীপে চিনের পরমাণু সাবমেরিন ঘাঁটি।এই পরিস্থিতিতে পম্পিওর বিবৃতি শুধুমাত্র ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বন্ধু রাষ্ট্রগুলির পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ নয়, বরং দক্ষিণ চিন সাগরে নিজের শক্তিবৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যও বটে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে এই অঞ্চলের প্রতি আমেরিকার পূর্ব প্রতিশ্রুতির প্রকাশেরও কৌশল বিশেষ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই বিবৃতির মাধ্যমে ফিলিপাইন্স ও ভিয়েতনামের পাশে দাঁড়ানো এবং দক্ষিণ চিন সাগরে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।প্রসঙ্গত, পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা বাহিনীর হানা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ৩ জুলাই পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান বিশ্বে সম্প্রসারণবাদের কোনও স্থান নেই, এবং উন্নয়নের সমর্থকরাই ভবিষ্যতে টিকে থাকবে। এ ছাড়া দক্ষিণ চিন সাগরে অবাধ নৌপরিবহণ নিয়ে ভারতের অবস্থানও পম্পিওর বিবৃতির সুরেই বাঁধা রয়েছে। চলতি বছরের শেষে ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তের দিল্লি সফরেও বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে ঠাঁই পাবে বলে মনে কতরা হচ্ছে।ইতিমধ্যেই স্কারবরো খাঁড়ি, স্প্র্যাটলি দ্বীপ, মিসচিফ খাঁড়ি এবং দ্বিতীয় টমাস শোল নিয়ে ফিলিপাইন্সকে সমর্থন জানিয়েছে আমেরিকা এবং ওই সমস্ত অঞ্চলে চিনের ক্ষমতা কায়েমের দাবিকে অবৈধ ও একতরফা বলে ঘোষণা করেছে। দক্ষিণ চিন সাগরকে বরাবর নিজেদের খিড়কির উঠোন বলে সম্বোধন করে এসেছে চিনের পিএলএ। শুধু তাই নয়, আসিয়ান সদস্য দেশগুলির উপরে সামরিক শক্তির প্রয়োগে ওই অঞ্চলে নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছে বেজিং। পাশাপাশি লাওস, কাম্বোডিয়া ও মায়ানমারের সঙ্গে সখ্যতা বহাল রেখে আসিয়ান ফোরামে নিজের প্রাধান্য বজায় রেখে চলেছে চিন। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার অবস্থান জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে তাদের চিন-বিরোধী মনোভাবে জোরালো সমর্থন জুগিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।