যে জন্য ইলন মাস্কের সঙ্গে বন্ধুত্ব পর্যন্ত ভেঙে গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের, সেই বিল অবশেষে পাশ হল। মার্কিন কংগ্রেসে বৃহস্পতিবার পাশ হয়ে গেল ‘বিগ বিউটিফুল বিল’।আইনসভার উচ্চকক্ষে বিল পাশ হয়েছিল আগেই। বৃহস্পতিবার ২১৮-২১৪, অর্থাৎ চার ভোটের ব্যবধানে পাশ হয়ে গেল নিম্ন কক্ষেও। শুক্রবার খোদ ট্রাম্প সই করবেন তাতে। বিল পরিণত হবে আইনে। এই বিল পাশ হওয়াকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক কেরিয়ারের অন্যতম বড় জয় বলেই ব্যাখ্যা করছেন বিশেষজ্ঞরা।এই বিল নিয়ে আগাগোড়া উচ্ছ্বসিত ট্রাম্প। কিন্তু আবার একেবারে উলটো সুর তাঁর এক সময়ের ঘনিষ্ট মাস্ক। কেবল এক বিলকে কেন্দ্র করেই দু’ জনের মধ্যে বিস্তর কাদা ছোঁড়াছুড়ি হয়ে গিয়েছে। তবে ট্রাম্প বরাবর বলেছিলেন, এই বিল রকেট গতিতে উন্নতি ঘটাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। অন্যদিকে মাস্ক বলছেন, এই বিল আইনে পরিণত হলে তা রাজনৈতিক আত্মহত্যা হবে রিপাবলিকানদের। ধ্বংস হয়ে যাবে মার্কিন মুলুক।ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই বিলের সমালোচনা শুরু হয়েছে। কী রয়েছে এই বিল-এ?বড় করছাড় প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প ‘ট্যাক্স কাটস অ্যান্ড জবস অ্যাক্ট’ নামের একটি আইন পাশ করেন। এটি কর হ্রাস করে ও করদাতাদের জন্য আয়কর থেকে ছাড় (স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন) বাড়ায়। যদিও এর সুবিধা উচ্চ আয়ের মানুষরাই বেশি পান। সুবিধা চলতি বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের পর বাতিল হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন বিল এটি স্থায়ী করছে।এই বিল-এ প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার কর ছাড় রয়েছে। এটি ২০০০ ডলারের শিশু কর ঋণকে ২,২০০ ডলারে উন্নীত করবে। নিম্ন আয়ের লক্ষ লক্ষ পরিবার সম্পূর্ণ ঋণ পাবে না। এছাড়া বয়স্কদের ঋণের ব্যাপারেও আসছে নয়া নিয়ম।ওভারটাইম ও টিপসের ওপর করছাড় এই বিলের আওতায় নতুন কিছু ক্ষেত্রে করছাড় যুক্ত হচ্ছে। তবে সেগুলো শুধু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকা পর্যন্তই বহাল থাকবে। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, এবার টিপস ও ওভারটাইম আয়ের ওপর করছাড় দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ি কেনার জন্য নেওয়া ঋণের সুদও কর থেকে ছাড় পাবে।৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য অতিরিক্ত ছয় হাজার ডলার করছাড় রাখা হয়েছে। তবে এমন বয়সীদের একক আয় ৭৫ হাজার ডলারের বেশি বা যৌথভাবে দেড় লাখ ডলারের বেশি হলে এ ছাড় প্রযোজ্য হবে না। এসব ছাড় ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট মেয়াদের শেষ বছর, অর্থাৎ ২০২৮ সালের শেষে উঠে যাবে।অভিবাসী বহিষ্কারে বিপুল বরাদ্দ এই বিলটিতে অভিবাসন এবং জাতীয় নিরাপত্তা প্রচেষ্টার জন্য আনুমানিক ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। অভিবাসীদের বহিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনায় ১৪ বিলিয়ন ডলার ও ২০২৯ সালের মধ্যে নতুন ১০ হাজার এজেন্ট নিয়োগে কয়েক বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।এছাড়া মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর নতুন প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরিতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে দেয়াল নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।মেডিকেইড ও খাদ্যসহায়তা কমছে নতুন বিলের ব্যয় কমাতে রিপাবলিকানরা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাজেটে ছাঁটাই করেছেন। এ দুটি কর্মসূচি হল ‘মেডিকেইড’ (দরিদ্র ও প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা) ও ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম’ বা স্ন্যাপ (খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি)।দুটি ক্ষেত্রেই বাজেট কমানোর পাশাপাশি নতুন কাজের শর্তও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিজ’–এর হিসাবে, এসব পরিবর্তনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা হারাতে পারেন এবং প্রতি পাঁচ স্ন্যাপ গ্রহীতার একজন, অর্থাৎ ৮০ লাখ মানুষ খাদ্যসহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় করছাড় স্টেট অ্যান্ড লোকাল ট্যাক্স বা ‘সাল্ট’–এ করছাড় কতটা দেওয়া হবে, তা বিলের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। অনেক মার্কিনকে ফেডারেল ট্যাক্সের পাশাপাশি নিজ নিজ অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় ট্যাক্সও দিতে হয়। ডেমোক্র্যাট-শাসিত অঙ্গরাজ্যগুলোর কয়েকজন রিপাবলিকান প্রতিনিধি সাল্টে করছাড়ের সীমা ১০ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার ডলার না করা পর্যন্ত বিলে নিজেদের সমর্থন দেননি। প্রতিনিধি পরিষদে এ দাবি মানা হলেও সিনেটের রিপাবলিকানরা জানিয়েছেন, এটি সাময়িক ব্যবস্থা।সিনেটের পদক্ষেপ অনুযায়ী, ২০২৮ সাল পর্যন্ত সাল্টে ছাড়ের সর্বোচ্চ সীমা ৪০ হাজার ডলার থাকবে।ঋণসীমা বাড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের সীমা বা ‘ডেট লিমিট’ ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়ানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, সরকার আগস্টের মধ্যেই বর্তমান ঋণসীমা ছাড়িয়ে যাবে এবং সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র ঋণ খেলাপিতে পড়বে, যা বড় ধরনের আর্থিক সংকট ডেকে আনতে পারে।বিশাল ব্যয়ের বোঝা সরকারি খরচে লাগাম টেনে ধরার উপায় হিসেবে এই বিলকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন রিপাবলিকানরা। প্রকৃতপক্ষে বিলটি আইনে পরিণত হলে ২০৩৪ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট–ঘাটতি ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে হিসাব দিয়েছে কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস। ঘাটতির বেশির ভাগ অংশ হবে ২০১৭ সালের করছাড়কে স্থায়ী করার খরচ।