খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ পুর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে জোরকদমে তৎপর হয়েছে কলকাতা পুরসভা। এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের জন্য ৩৮৫টি আবেদন জমা পড়েছে পুরসভায়। সেইসব আবেদন খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। তবে কাগজপত্রে গরমিল থাকায় স্ক্রুটিনির সময় বেশ কিছু জটিলতার মুখে পড়েছেন আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন: খিদিরপুরে ‘ম্যান মেড ফায়ার’? শুভেন্দুর প্রশ্নবাণের কী জবাব দিলেন ফিরহাদ?
পুরসভা সূত্রে খবর, যাঁদের নথি ঠিকঠাক রয়েছে, তাঁদের নাম দ্রুত অনুমোদন করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে অনেক আবেদনকারীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, জমা পড়া কাগজে দোকানের যাঁর নাম রয়েছে, বাস্তবে দোকান চালাচ্ছেন অন্যজন। কারণ, সময়ের সঙ্গে দোকান হস্তান্তর হয়েছে, অথচ মালিকানা সংশোধনের কোনও সরকারি রেকর্ড নেই। ফলে পুরসভা যে পুরনো তালিকা হাতে পেয়েছে, তার সঙ্গে আবেদনকারীদের পরিচয় মেলাতে গিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে, আগুনে ভস্মীভূত হওয়া ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ীভাবে দোকান তৈরির প্রক্রিয়াও শুরু করেছে পুরসভা। বাজারের পাশে ফাঁকা জমিতে আপাতত ২৫০টি অস্থায়ী দোকান তৈরির জন্য একটি প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই কাজের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে। পরে আরও দোকান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এই গোটা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে পুর আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পান ও ব্যবসা আবার শুরু করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এর পাশাপাশি শুধু খিদিরপুর নয়, শহরের সব পুর বাজারের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখার পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা। ইতিমধ্যে কলকাতার ৫৩টি বাজারে ‘ফায়ার অডিট’ শুরু হয়েছে। দমকল ও পুরসভার যৌথ দল বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম, জলের উৎস এবং দমকলের প্রবেশপথের বাস্তব পরিস্থিতি। কোথায় রিজার্ভার বা পাম্প বসানো দরকার, কোথায় টিউবওয়েল লাগবে সেসব রিপোর্ট আকারে এক মাসের মধ্যে জমা দেবে দমকল বিভাগ।
মেয়র আরও জানিয়েছেন, কলকাতার বহু পুরনো বাজার অপরিকল্পিতভাবে তৈরি। ভেতরের রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকা কঠিন হয়। তাই নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে পরিকাঠামো বদলের পরিকল্পনা চলছে। একই সঙ্গে পুর বাজারগুলিতে নিয়মিত ফায়ার মক ড্রিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জানা যাচ্ছে, আগামী সাত জুলাই এই বিষয় নিয়ে হাই পাওয়ার কমিটির দ্বিতীয় দফার বৈঠক বসবে। সেখানে বহুতলে ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে অগ্নি সুরক্ষার নিয়ম আরও কড়াভাবে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হতে পারে।