কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এই মামলার তদন্তে প্রথমে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন হয়। তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। বর্তমানে তারাই তদন্ত চালাচ্ছে। এবার শুক্রবার ভোররাতে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুনর্নির্মাণ চালালেন তদন্তকারীরা। ওই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা বুঝতেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করলেন তদন্তকারীরা। এ দিন সকাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে সেই প্রক্রিয়া।
আরও পড়ুন: কসবা গণধর্ষণকাণ্ডে এবার পুলিশের নজরে অপর এক TMCP নেতা, গভীর রাতে নির্যাতিতাকে আবার ফোন করেছিল মনোজিৎ
পুলিশ ভোর তিনটে নাগাদ মূল অভিযুক্ত ‘এম’-সহ আরও তিন অভিযুক্ত ‘পি’, ‘জে’ এবং এক নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে পৌঁছে যায় কলেজে। গোটা এলাকায় ছিল কড়া নিরাপত্তা। কলেজ চত্বরে ঢুকে অভিযুক্তদের সঙ্গে সে দিনের পরিস্থিতি ধাপে-ধাপে মিলিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। পুনর্গঠনের প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়। পাশাপাশি থ্রিডি স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমেও ঘটনাস্থলের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, পুনর্গঠনের সময় অভিযুক্তদের বয়ান ও গতিবিধি খতিয়ে দেখা হয়েছে। নির্যাতিতার যে বিবৃতি পুলিশের কাছে আছে, সেটির সঙ্গে মেলানো হবে পুনর্নির্মাণে পাওয়া প্রতিটি তথ্য। তদন্তে তা বড় ভূমিকা নিতে পারে বলে মত গোয়েন্দাদের।
এর আগেও নির্যাতিতাকে কলেজে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন করানো হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কলেজ চত্বরে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। প্রথমে ইউনিয়ন রুমে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়। পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ওই সময় রক্ষীর কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি তিনি। উলটে তাঁকে ঘরের সামনে বসিয়ে রেখে ওই নারকীয় ঘটনা ঘটানো হয় বলে অভিযোগ। নির্যাতিতার দাবি, বাধা দিলে তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ঘটনায় ১৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, যার মধ্যে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায়ও আছেন। ঘটনাস্থলের সাত ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
ধৃত চার অভিযুক্তের মধ্যে মূল অভিযুক্ত ‘এম’ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। সে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিল। বাকি দুই অভিযুক্ত ‘পি’ ও ‘জে’ এখনও ওই কলেজেই পড়ে। প্রত্যেকেই তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অতীতেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন থানায় তাঁর নামে ১১টি মামলা নথিভুক্ত। আগে একাধিকবার মহিলাদের হেনস্থা করেছেন বলেও অভিযোগ। তদন্তকারী দল মনে করছে, ঘটনার পুনর্নির্মাণে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা নির্যাতিতার অভিযোগ ও প্রযুক্তিগত প্রমাণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব হবে।