গার্হস্থ্য হিংসা কিংবা বধূ নির্যাতনের মামলায় শুধুমাত্র অভিযোগকারিণী বলেছেন বলেই, তাঁর স্বামীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও অকারণে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে, এমনটা যেন কখনও না হয়। সেই বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এ নিয়ে নিম্ন আদালতগুলিকে সতর্ক করল সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি)-এর ৪৯৮এ ধারার অধীনে মামলা রুজু করার ক্ষেত্রে এই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করার উপর জোর দিল শীর্ষ আদালত। একটি নির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতে এই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সি টি রবিকুমার এবং বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চে গার্হস্থ্য হিংসার একটি মামলা শুনানির জন্য ওঠে। সেই মামলায়, 'আক্রান্ত' বধূর বাবার করা একটি এফআইআর খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। সেই এফআইআর-এ ওই বধূর স্বামীর দূর সম্পর্কের এক ভাই এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি নির্যাতনের মামলা করা হয়েছিল।
বধূর স্বামীর যে তুতো ভাইয়ের নামে ওই এফআইআর-এ অভিযোগ করা হয়েছিল, তিনি তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ খারিজের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
এর আগে ওই ব্যক্তি পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হন। কিন্তু, উচ্চ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগ খারিজ করতে অস্বীকার করে। এরপরই শীর্ষ আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আদালত তাঁর পক্ষে রায় দিয়ে ওই এফআইআর খারিজ করে দেয়।
এই মামলায় হাইকোর্টের সমালোচনাও করে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ হল - এই ধরনের মামলায় স্বামীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ অতিরঞ্জিত কিনা, সেটা অবশ্যই হাইকোর্টকে বিচার করে দেখতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে আরও জানায়, চার্জ গঠনের আগে পর্যন্ত ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪৮২ নম্বর ধারার অধীনে আদালতে আবেদন করা যেতেই পারে। কিন্তু, সেই আবেদন যদি কেবলমাত্র এই যুক্তিতে খারিজ করে দেওয়া হয়, যে চার্জ গঠনের সময় অভিযুক্তরা আইনি এবং বাস্তব ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে তর্ক করতে পারবেন, তাহলে সেটা মোটেও সুবিচার হবে না।
সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের তরফে আরও বলা হয়, আইনের ভাষায় 'আত্মীয়'-এর কোনও সংজ্ঞা দেওয়া নেই। তাই সেটি এমন অর্থযুক্ত হতে হবে, যা সাধারণভাবেই বোঝা যায়।
সাধারণভাবে এটা অনেকেই হতে পারেন। যেমন - যেকোনও ব্যক্তির বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, ভাইপো, ভাগ্নে, ভাইঝি, ভাগ্নী, নাতি অথবা নাতনি অথবা কোনও এক ব্যক্তির স্বামী কিংবা স্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট মামলায়, 'নির্যাতিতা' বধূর স্বামীর দূর সম্পর্কে ভাই ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত এফআইআর এবং অন্য়ান্য তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে শীর্ষ আদালতের মনে হয়েছে, তাঁদের কাঠগড়ায় তোলার মতো যথাযথ কোনও কারণই এই মামলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবং সেটা যে আদালতের মেনে নিতে কোনও সমস্যা নেই, তাও সরাসরি বলা হয়েছে।
শীর্ষ আদালতের কথায়, 'এই ধরনের অভিযোগ এবং অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে যদি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু করা হয়, তাহলে তা নেহাতই আদালতের প্রক্রিয়ার অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই হবে না।'
এরপরই ২০১০ সালের একটি রায়ের উল্লেখ করে, নিম্ন আদালতগুলিকে শীর্ষ আদালত সতর্ক করে বলে, এই ধরনের গার্হস্থ্য হিংসার মামলায় যাতে স্বামীর দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের অকারণে মামলায় না জড়ানো হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট মামলা প্রসঙ্গে জানা যায়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অমিত শর্মাকে বিয়ে করেন বন্দনা শর্মা। ওই বছরেরই মার্চ মাসে অমিত কানাডা চলে যান এবং বন্দনা তাঁর শ্বশুরবাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে ভারতেই থেকে যান।
এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বন্দনাও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কানাডা চলে যান। তারপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কানাডার পরিবার আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা রুজু করেন অমিত।
তার জেরে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বন্দনার বাবা বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তাতে অমিতের পাশাপাশি তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়।