গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন অংশে। তার জেরে নদীগুলিতেও জল বাড়তে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও আবার বিপদসীমা ছাপিয়ে গিয়ে লোকালয়ে জল ঢুকে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে নিচু এলাকাগুলি থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষজন। গত ২৪ ঘন্টায় শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশে বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যা কবলিত উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশে বিপদসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে যমুনার জল। বহু জায়গায় লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে নদীর জল। শুধু যমুনাই নয়, সরযূ, কেন এবং চম্বলের মতো নদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে উত্তরপ্রদেশের ১৭টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে কানপুর নগর, লখিমপুর খেরি, আগ্রা, আউরাইয়া, চিত্রকূট, বালিয়া, বান্দা, গাজিপুর, মির্জাপুর, প্রয়াগরাজ, বারাণসী, চান্দৌলি, জালাউন, কানপুর দেহাত, হামিরপুর, এটাওয়া এবং ফতেহপুর।প্রয়াগরাজে গঙ্গা এবং যমুনা বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ইতিমধ্যে অযোধ্যা, বান্দা এবং এটাওয়ায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। অযোধ্যায় সরযূ নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পুলিশ এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, বন্যা কবলিত জেলাগুলির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনিক আধিকারিকদের ত্রাণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রীরা বিভিন্ন জেলায় উদ্ধার অভিযান পর্যবেক্ষণ করছেন।ত্রাণ কমিশনার ভানু চন্দ্র গোস্বামী জানিয়েছেন, বন্যার জেরে ৩৭টি তহসিল এবং ৪০২টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ১৭টি জেলার ৮৪,৩৯২ জন বাসিন্দার উপর। বন্যায় ৩৪৩টি বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৩২৭টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ৪,০১৫ হেক্টরেরও বেশি কৃষি জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মোট ৯০৫টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেখানে ১১,২৪৮ জনকে উদ্ধার করে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ১৭টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় ত্রাণ তৎপরতা তদারকির জন্য ১১ সদস্যের মন্ত্রী দল মোতায়েন করেছেন। তিনি জল নিষ্কাশন, ত্রাণ শিবিরে খাদ্য, ওষুধ, স্যানিটেশন এবং মহিলা ও শিশুদের প্রয়োজনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বন্যাকবলিত প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা, খাদ্য, আশ্রয় এবং স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ
ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ। বন্ধ রয়েছে ৪০০-রও বেশি রাস্তা। হড়পা বাণের কারণে মালানা-২ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি কফারড্যাম আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হড়পা বাণের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে মালানা নদীতে ডাম্পার, পাথর ভাঙার যন্ত্র এবং গাড়ি ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে।শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে হিমাচলের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যার জেরে মান্ডি জেলায় ১৭৪টি রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। চাম্বায় বন্ধ হয় ১০০টিরও বেশি রাস্তা। বিয়াস এবং এর উপনদীগুলিতে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। হামিরপুর জেলার সুজনপুরের কাছে এই নদীর উপর সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে।চণ্ডীগড়-ধর্মশালা জাতীয় মহাসড়কও বন্যার কবলে পড়েছে।এই পরিস্থিতিতে উপমুখ্যমন্ত্রী মুকেশ অগ্নিহোত্রী বলেছেন, ‘রাজ্য সরকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, হিমাচল প্রদেশে বর্ষা শুরুর পর এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাতজনিত কারণে ১০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।