সম্প্রতি বিশ্বের একাধিক দেশে জন্মহার কমার সমস্যা সামনে এসেছে। নানা মহলের দাবি, একাধিক কারণে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ বিয়ে করতে বা সন্তানের জন্ম দিতে রাজি হচ্ছে না।
ফলত, মারাত্মক হারে কমছে নবজাতকদের সংখ্য়া। এবার কি তবে রাশিয়াও সেই সমস্য়ায় পড়ল? রুশ সরকারের সাম্প্রতিক একটি পদক্ষেপে এই জল্পনা জোরালো হয়ে উঠেছে।
তাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, এবার থেকে যদি কোনও ছাত্রী যদি সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন, তাহলেই তাঁকে ১ লক্ষ রুবেলের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ হল - ৮২ হাজার টাকার কিছু বেশি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, যে ছাত্রীদের বয়স ২৫ বছরের কম, এবং যাঁরা কারেলিয়া শহরে থাকেন, তাঁরা যদি সন্তান প্রসব করেন, তাহলে তাঁদের এই আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই নয়া নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে।
যদিও সরকারের এই ঘোষণা নিয়ে অনেক অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে দাবি করেছে 'দ্য মস্কো টাইমস'। পর পর সন্তানের জন্ম দিলেও এই সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা, সেটা ওই সরকারি নির্দেশিকায় উল্লে করা হয়নি বলে দাবি করা হচ্ছে।
তবে, কোনও ছাত্রী যদি মৃত সন্তান প্রসব করেন, তিনি এই সহযোগিতা পাবেন না। এছাড়া, প্রসবের পর যদি সন্তানের মৃত্যু হয় কিংবা ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর যদি কোনও ধরনের শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলেও এই আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা, সেটা স্পষ্ট করে ওই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি।
তাছাড়া, এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর নতুন করে রুশ মহিলাদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও তাঁদের সুরক্ষা প্রদান নিয়েও নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
কারণ, ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার নাকি সবসময়েই জাতীয়স্তরে বড় পরিবার সৃষ্টির পক্ষপাতী। অথচ, মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে সেই সরকারের তেমন কোনও মাথাব্যথা নেই।
উপরন্তু অভিযোগ তোলা হয়, ২০১৭ সালে বেশ কিছু গার্হস্থ্য হিংসার বিষয়কে ফৌজদারি ধারার আওতায় বাইরে নিয়ে আসা হয়। যা দেশজুড়ে নয়া আশঙ্কা তৈরি করেছে।
অনেকেই বলছেন, ইতিমধ্যেই ইউক্রেন থেকে ফিরতে শুরু করেছেন রুশ সেনারা। যাঁরা এত দিন পরিবারের থেকে দূরে ছিলেন। যুদ্ধে অনেক সেনা হারিয়েছে রাশিয়া। নাগরিকদের একাংশ দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার জন্মহার বাড়াতেই সরকারের তরফে ছাত্রীদের সন্তান প্রসবে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মতো নীতি আনা হচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দিনে গর্ভনিরোধক ওষুধ নিষিদ্ধ করা, জাতীয়তাবাদী পরিবার পরিকল্পনায় জোর এবং সন্তানহীন জীবনযাপনের উপর রাশ টানার মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারে রুশ সরকার।