শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই একদা 'বন্ধু' বাংলাদেশের মাটিতে বারবার উঠেছে ভারতবিরোধী স্লোগান। কখনও কোনও মৌলবাদীর ভিডিয়ো বার্তা, কখনও সোশাল মিডিয়ায় হুঁশিয়ারি, আবার কখনও সরাসরি সেদেশের কিছু লোককে দেখা গিয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে টেলিভিশনের ক্যামেরায় হুঙ্কার দিতে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের নানা এলাকায় হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, এই হিংসায় মদত রয়েছে বাংলাদেশ ও পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর!
এমন আবহেই গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে গিয়েছে নারকীয় জঙ্গি হামলা। সূত্রের দাবি, এই ঘটনার পর দেশের সীমান্তগুলির নিরাপত্তায় আর কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না প্রশাসন। সেই কারণেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও যতটা সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলতে চাইছে ভারতীয় সেনা।
সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য অনুসারে - ইতিমধ্য়েই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সেনার তৎপরতা বেড়েছে। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি কয়েকটি স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট বা কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। আপাতত সেই পয়েন্টগুলির নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিকাঠামো আরও উন্নত করা হচ্ছে। সেনা গোয়েন্দাদের তৎপরতাও এইসব জায়গাগুলিতে বাড়ছে।
প্রসঙ্গত, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬ কিলোমিটার। ভারতের মধ্যে পাঁচটি রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে এই সীমান্ত এলাকা। এর মধ্যে অধিকাংশটাই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
এই সীমান্ত এলাকায় এখনই পুরো দমে সেনা মোতায়েন করা হবে, তা নয়। তবে, সীমান্তের নিরাপত্তায় নিযুক্ত আধাসেনার সঙ্গে এবার থেকে সেনাও যৌথভাবে কাজ করবে। এই ব্য়বস্থাপনার পোশাকি নাম - কম্প্রিহেনসিভ ইন্টিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিআইবিএম। যার অধীনে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাড়তে পারে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারি। এছাড়াও, নিরাপত্তার স্বার্থে উত্তরবঙ্গের হাসিমারা এবং বাগডোগরা বিমানঘাঁটিতে বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান রাফাল এনে রাখারও উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুধুই যে স্থলভাগ রয়েছে, তা নয়। রয়েছে নদী ও জলভাগও। সেই সমস্ত সীমান্তে কাঁটাতার লাগানো যায়নি। এছাড়া, জমিতেও এমন বহু জায়গা রয়েছে, যেখানে নানা কারণে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। এবার এই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কীভাবে এই এলাকাগুলিকেও নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আনা যায়, তা নিয়ে শীঘ্রই বৈঠকে বসতে চলেছে তারা।
জানা গিয়েছে, যত দিন না কোনও স্থায়ী সমাধানসূত্র বের হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত অরক্ষিত এই সীমান্তগুলিতে নাইট ভিশন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোর কথা ভেবেছে ভারতীয় সেনা। একইসঙ্গে, আধাসেনা যেমন মোতায়েন রয়েছে, তারা তো থাকছেই।
অন্যদিকে, সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী স্বয়ং জানিয়েছিলেন, সীমান্তে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর আনাগোনা বাড়ছে। যা নিয়ে বিএসএফ-কেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু, পহেলগাঁও হামলার পর একযোগে পাক ও বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদে হিংসার পর ইতিমধ্যেই ওই জেলায় আধাসেনার ক্যুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি)-এর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তের যেসমস্ত জায়গায় সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি) কিংবা ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) মোতায়েন রয়েছে, সেই এলাকাগুলিতেও সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলিকে একত্রিতভাবে 'ইউনিফায়েড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট'-এর আওতায় এনে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা ভাবা হচ্ছে।
বাংলাদেশে পালাবদলের পর বারাবার ভারতের 'চিকেন নেক' দখলের হুমকি দিয়েছে সেদেশের মৌলবাদীরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের। কারণ, এই করিডর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগসূত্র। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর সেখানেও সেনার 'ত্রিশক্তি কোর' এবং অসম রাইফেলসের ব্যস্ততা বেড়েছে।