গালওয়ানে ভারতীয় সেনার সঙ্গে লাল ফৌজের সংঘর্ষ ঘিরে নয়া দিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে যে হিমশীতল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তা ক্রমশ গলছে।মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক-হুমকির মাঝেই ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথমবার চিনের মাটিতে পা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ৩১ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চিনে বসতে চলেছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সামিট। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, আগামী ৩০ অগস্ট একদিনের জাপান সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে ইন্দো-জাপান বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। ওই সম্মেলনে থাকবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। জাপান থেকে সোজা চিনে পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সে দেশের তিয়ানজিন শহরে বসছে সাংহাই অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সামিট। ওই সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও উপস্থিত থাকবেন। দুই নেতার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।এই আন্তর্জাতিক জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানও। এসসিও বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যোগ দেবেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি। তবে পহেলগাঁও হামলা এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরবর্তী সময়ে এসসিও-র রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোনও বার্তা দেবেন কিনা, সে দিকে নজর থাকবে।
এর আগে চিনে এসসিও-র প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রীদের পৃথক সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। প্রথমে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং পরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, উভয়েই সেই সম্মেলনের জন্য চিনে গিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ মুহাম্মদের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গে নাম না করে ইসলামাবাদকে নিশানা করে এসেছেন রাজনাথ সিং।স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত কোনও দু’মুখো আচরণ বরদাস্ত করবে না।
অন্যদিকে, ইতিমধ্যে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপরেও শুল্ক নিয়ে বার বার ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখার জন্য জরিমানার হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। বস্তুত, রাশিয়ার থেকে জ্বালানি কেনা দেশগুলির মধ্যে ভারতের পাশাপাশি রয়েছে চিনও। তাই উদ্ভূত কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর চিন সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।এদিকে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ওয়াশিংটনকে কোণঠাসা করতে রাশিয়া চাইছে ভারত ও চিনকে নিয়ে বিশেষ জোট গড়তে। এসসিও সম্মেলন ওই জোট গড়ার সলতে পাকানোর ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে শেষবার চিনের মাটিতে পা রেখেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর ২০২০ সালে গালওয়ান সীমান্তে সংঘর্ষে জড়ায় ভারতীয় সেনা ও লাল ফৌজ। ওই সংঘর্ষে দুই দেশের বেশ কয়েকজন সেনা জওয়ান প্রাণ হারান। এরপরেই নয়া দিল্লির সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। তবে সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে কথা বলে দুই দেশই সীমান্ত উত্তেজনা অনেকটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়।তবে গত বছরে রাশিয়ার কাজানে আন্তর্জাতিক জোট ব্রিকস-এর পার্শ্ববৈঠকে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তারপর থেকে সীমান্ত সমস্যা কাটিয়ে দু’দেশে মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে। চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা অজিত ডোভাল ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠকও করেন।