ঐতিহাসিক ও বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় প্রযুক্তির প্রতীক- সমুদ্রে অবস্থিত ভারতের প্রথম উল্লম্বভাবে উত্তোলিত রেলসেতু পাম্বান ব্রিজের উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মান্নান উপসাগরের উপরে পুরনো যে পাম্বান সেতু ছিল, সেটা 'বুড়ো' হয়ে যাওয়ায় নয়া ব্রিজ তৈরি করা হয়। আর উদ্বোধনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে রামনবমীর দিনটা। সেই ঐতিহাসিক ব্রিজের উদ্বোধনের আগে রেল মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, 'অতীতের সেতু, নতুনকে তুলে ধরছে, অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাম্বান। এই রামনবমীতে ভারতের প্রথম ভার্টিকাল লিফট রেলওয়ে সি ব্রিজের (প্রথম উল্লম্বভাবে উত্তোলিত রেলসেতু) সাক্ষী থাকুন।'
১৭ মিটার উঠে যাবে পাম্বান ব্রিজের উলম্ব অংশ
নয়া পাম্বান ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে, তা মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রামেশ্বরমকে যুক্ত করেছে। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, নয়া পাম্বান ব্রিজের দৈর্ঘ্য হল প্রায় ২.০৮ কিলোমিটার। দু'প্রান্তের প্রায় ৩৫ মিটার উঁচু স্তম্ভ থেকে সেই সেতুকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে জাহাজ চলাচল করতে পারে, সেজন্য পাম্বান সেতুর মাঝবরাবর ৭২.৫ মিটার লম্বা এবং ৬৪০ টনের উলম্ব অংশ আছে, যা ১৭ মিটার উঠে যাবে। সেইসময় যাতে রেললাইনের সংযোগ এবং ওভারহেড তারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়, সেজন্য বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৪৫ মিনিট নয়, মাত্র সাড়ে ৫ মিনিট লাগবে
আর সেই চ্যানেল খোলার জন্য নয়া পাম্বান সেতুর মেরেকেটে সাড়ে পাঁচ মিনিট লাগবে। পুরনো পাম্বান সেতুর ক্ষেত্রে ৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগত। রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, নয়া পাম্বান সেতুর ফলে একদিকে যেমন সহজেই বড় জাহাজ চলাচল করত পারবে, তেমনই ট্রেন পরিষেবা আরও মসৃণ হয়ে উঠবে বলে রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে।
রামেশ্বরমের সঙ্গে পৌরাণিক যোগ
পাম্বান ব্রিজ যে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত বা যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। সংস্কৃতির সঙ্গেও পাম্বান ব্রিজের গভীর যোগ আছে। রামায়ণ অনুযায়ী, রামেশ্বরমের কাছে অবস্থিত ধনুষকোড়ি থেকে রামসেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। আর সেই রামেশ্বরমকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে ১৯১৪ সালে পাম্বান ব্রিজ তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। ক্যান্টিলিভার (ব্রিজের জন্য কোনও দেওয়াল বা কাঠামো থেকে যে ধাতু বা কাঠের বিস্তৃত অংশ) কাঠামোর মাধ্যমে সেই ব্রিজ তৈরি করা হয়েছিল।
কঠিন পরিবেশ, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে
সেই পুরনো ব্রিজ দীর্ঘদিন ধরে রামেশ্বরম ও মূল ভূখণ্ডকে যুক্ত করে এলেও ক্রমশ স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। কারণ যেখানে পাম্বান ব্রিজ আছে, সেটা মোটেও সহজ নয়। লাগাতার ঝড়-ঝাপটা, ঢেউ সহ্য করতে হয়। সেই পরিস্থিতিতে পুরনো ব্রিজের পাশেই নয়া পাম্বান সেতু তৈরি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে নয়া ব্রিজ তৈরির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে নির্মাণকাজটা মোটেও সহজ ছিল না। পক প্রণালীর উত্তাল সমুদ্র, উত্তাল হাওয়া, আবহাওয়ার আচমকা পরিবর্তনের মতো প্রতিকূলতা সামলেই নয়া পাম্বান সেতু এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে জং না ধরে যায় এবং সমুদ্রের কঠোর পরিবেশের মোকাবিলা করতে পারে। ওই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিকম্পের যে আশঙ্কা থাকে, সেটার কথা মাথায় রেখেই নয়া পাম্বান সেতু তৈরি করা হয়েছে।