এবার থেকে কেবলমাত্র একটি সার্টিফিকেট কোর্স করলেই রোগীদের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারবেন হোমিওপ্য়াথ চিকিৎসকরা! এবং সেই ওষুধের নাম প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারবেন তাঁরা! দোকানদারকে সেই প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ বিক্রিও করতে হবে! এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে মহারাষ্ট্র সরকার।
কী সেই নির্দেশিকা?
মহারাষ্ট্র খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ)-এর তরফে বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্য়ের যেসমস্ত হোমিওপ্য়াথ চিকিৎসক মডার্ন ফার্মোলজি নিয়ে কোনও একটি সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন, তাঁরা সকলেই তাঁদের রোগীদের প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনে অ্যালোপ্যাথ ওষুধের নাম লিখতে পারবেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, রাজ্যের খুচরো ও পাইকারি ওষুধ বিক্রেতাদের উদ্দেশে এই জ্ঞাতার্থে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, প্রায় এক দশক আগে মহারাষ্ট্র সরকার রাজ্যের নথিভুক্ত পেশাদার চিকিৎসকদের সংজ্ঞা বদল করেছিল। এই বদল আনা হয়েছিল মহারাষ্ট্র মেডিক্যাল কাউন্সিল অ্য়াক্ট-এর অধীনে। সেই নয়া নিয়মের অধীনে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকদেরও নথিভুক্ত পেশাদার চিকিৎসকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা জারি করা হল।
মহারাষ্ট্র এফডিএ-র নয়া নির্দেশিকায় লেখা হয়েছে, 'রাজ্যে যত খুচরো ও পাইকারি ওষুধ বিক্রেতা রয়েছেন, তাঁরা যেকোনও নথিভুক্ত পেশাদার হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুসারে অ্য়ালোপ্যাথিক ওষুধ বিক্রি করতে পারবেন। কেবলমাত্র, ওই হোমিওপ্য়াথ চিকিৎসকরা যদি মডার্ন ফার্মোলজি নিয়ে কোনও একটি সার্টিফিকেট কোর্স সম্পূর্ণ করে থাকেন, তাহলেই তাঁদের প্রেসক্রিপশনে অ্য়ালোপ্য়াথিক ওষুধ দেওয়া যাবে।'
এই ঘটনায় বেজায় খুশি রাজ্যের হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকরা। মহারাষ্ট্র হোমিওপ্যাথিক কাউন্সিলের প্রশাসক ডা. বাহুবলী শাহ সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, এর ফলে তাঁরাও মডার্ন ফার্মোলজি বা আধুনিক ওষুধ নিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারবেন।
যদিও, মহারাষ্ট্র সরকারের এই পদক্ষেপে মোটেও খুশি নয় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্য়াসোসিয়েশন (আইএমএ)। তারা এই 'মিক্সোপ্যাথি' প্র্যাকটিস নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সূত্রের দাবি, খুব সম্ভবত মহারাষ্ট্র সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হতে পারে আইএমএ।
সংগঠনের মহারাষ্ট্র শাখার রাজ্য সভাপতি ডা. সন্তোষ কদম বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সরব হয়েছেন। তাঁকে উদ্ধৃত করে টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, 'যখন ওঁদের (হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকদের) এই অনুমোদন (অ্য়ালোপ্য়াথিক ওষুধ নিয়ে প্র্যাকটিস করার) দেওয়া হয়েছিল, তখনই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। এবং সেই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। এফডিএ যে নির্দেশিকা জারি করেছে, আমরা তার বিরুদ্ধেও আদালতে যাব।'
অন্যদিকে, শুক্রবার এফডিএ-র কমিশনার রাজেশ নরভেকর জানিয়েছেন, আসলে ওষুধ বিক্রেতাদের মধ্যে এ নিয়ে একটি সংশয় ও বিভ্রান্তি ছিল। কোনও হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক অ্য়ালোপ্যাথিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করলে তাঁরা সেই ওষুধ আদৌ বিক্রি করবেন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধায় থাকতেন।
রাজেশ বলেন, 'আমাদের নির্দেশিকায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০১৬ সালেই রাজ্য সরকার নথিভুক্ত পেশাদার চিকিৎসকদের সংজ্ঞা বদল করেছিল। যে হোমিপ্য়াথ চিকিৎসকরা সার্টিফিকেট কোর্স করেছেন, তাঁদেরও এর আওতায় আনা হয়েছিল। সেই অনুসারে, তাঁরাও মডার্ন ফার্মোলজি নিয়ে প্র্য়াকটিস করতে পারেন।'