২৫,৭৫২ জনের চাকরি বাতিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁদের। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
২০১৬ সালের গোটা প্যানেলটা বাতিল করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। তবে মানবিক দিক থেকে চাকরি থাকছে ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাসের। এবার জেনে নিন এই যে চাকরি বাতিলের রায় তার আগে পর্যায়গুলি ঠিক কী ছিল?
আনন্দবাজার ডট কমের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এসএসসিতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর সেই বছরই ২৭শে নভেম্বর হয়েছিল পরীক্ষা। ওএমআর শিটে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল চাকরিপ্রার্থীদের। তারপর অপেক্ষা। এল ১২ মার্চ ২০১৮। চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশ করা হল। ২৮ অগস্ট প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরি মিলেছিল।
নতুন চাকরি। স্কুলে যাচ্ছিলেন শিক্ষকরা। আচমকাই ২০২১ সালের একের পর এক মামলা হতে থাকে। সেই সময় একাধিক মামলায় দাবি করা হয় গ্রুপসি গ্রুপ ডি কর্মী, নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে ব্যপক দুর্নীতি হয়েছে। এরপর ২০২১ সালে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় নির্দেশ দিয়েছিলেন একটি মামলায় সিবিআই তদন্তের। এরপর দু বছরে অন্তত ১০টি দুর্নীতির মামলায় তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকী বেআইনি নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের কিছু রায় স্থগিত করে দিয়েছিল হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ। পরে আবার সিঙ্গল বেঞ্চের কিছু রায় বহাল রাখে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর এই সমস্ত নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ফের শুরু হল মামলা। সুপ্রিম কোর্টে বিক্ষিপ্তভাবে একের পর এক মামলা হতে থাকে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি একটা বিশেষ বেঞ্চ গঠন করবেন। সেখানেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার যাবতীয় শুনানি হবে। সেটা ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। সেই অনুসারে ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বদ রশিদির বিশেষ বেঞ্চে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১৭টি শুনানি হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল ২৮২ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করল হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
হাইকোর্টের রায়
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল ২০১৬ সালের এই নিয়োগ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪ ও ১৬ ধারা লঙ্ঘনকারী। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়েছিল চাকরি যাবে ২৫, ৭৫৩জনের।
ওই মামলায় সিবিআইকে তদন্ত করে তিন মাসের মধ্য়ে নিম্ন আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট
হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চের রায় ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা মধ্যে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। ২৯শে এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে।
২০২৪ সালের ৭ মে হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জানায় এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর বেআইনিভাবে নিযুক্ত ব্যক্তিদের পুরো বেতন ফেরত দিতে হবে।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট জানায় ওই মামলার প্রধান পাঁচটি পক্ষ পশ্চিমবঙ্গ সরকার, এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, হাইকোর্টের মূল মামলাকারীরা, হাইকোর্টের নির্দেশে যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে ও সিবিআইয়ের বক্তব্য শুনবে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়
সব মিলিয়ে মোট ২০ বার শুনানির জন্য ওঠে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ আইনজীবী মামলায় অংশ নিয়েছিলেন। শেষে ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির শেষ হয় প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে। রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল আদালত। এরপর ২রা মার্চ দেখা যায় ৩রা মার্চ সেই মামলার রায় ঘোষণা হবে। আর বৃহস্পতিবার সেই মামলার রায়ে চাকরি বাতিল।
কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বললেন, ‘বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান করি। তবে এই রায় মেনে নিতে পারছি না। আমরাও রেকর্ড খুঁজে বের করব, ২০১৬ তে কারা কারা মন্ত্রী ছিলেন। কোনও একটা জেলা তো আমি জানি, কীভাবে চাকরি হয়েছে। তবে আমাদের কাছে কোনও রেকর্ড নেই। কারও কাছে থাকলে দেবেন। কলকাতা হাইকোর্টে প্রথম এই ভার্ডিক্ট যিনি দিয়েছিলেন, তিনি এখন বিজেপির এমপি হয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি এটা বিজেপি–সিপিএম করিয়েছে।’