শুক্রবার ভোরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হায়দরাবাদকাণ্ডে চার অভিযুক্তের মৃত্যুর পরে ফের সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিলেন আইপিএস অফিসার বিশ্বনাথ সি সজ্জনার।১৯৯৬ সালের আইপিএস অফিসার সজ্জনারকে দেশের অন্যতম সেরা এনকাউন্টার বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য করা হয়। স্বভাবত মৃদুভাষী এবং বন্ধুবত্সল সজ্জনারের নাম প্রথম ছড়িয়েছিল ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে, যখন ওয়ারাঙ্গল পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় এস শ্রীনিবাস রাও, বি সঞ্জয় ও পি হরিকৃষ্ণ। ওই তিন জনের বিরুদ্ধে ওই বছর ১০ ডিসেম্বর কাকাটিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই ছাত্রীর ওপর অ্যাসিড হামলার অভিযোগ ছিল। ঘটনায় স্বপ্নিকা নামে এক ছাত্রীর মৃত্যু হয় এবং তাঁর বন্ধু প্রণীতা গুরুতর ভাবে পুড়ে গেলেও প্রাণে বাঁচেন।ওই হামলার জেরে সেই সময় দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দেয় এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়ারাঙ্গলের এসপি সজ্জনারের নেতৃত্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তার দুই দিনের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মারা যায় তিন অভিযুক্ত। ঘটনায় উচ্ছ্বসিত হয়ে সজ্জনারকে শাল ও পুষ্পস্তবক উপহার দিয়ে সংবর্ধনা জানান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা।এরপর তত্কালীন সংযুক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে স্পেশ্যাল ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের প্রধান হিয়েবে দায়িত্ব গ্রহ করেন এই আইপিএস অফিসার। তাঁর আমলে তথাকথিত সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন মাওবাদি জঙ্গিনেতাকে খতম করা হয়। একাধিক জঙ্গি নেতা সেই সময় আত্মসমর্পণও করেন।২০১৬ সালের অগস্ট মাসে তেলেঙ্গানা পুলিশের বিশেষ মাওবাদী-দমন বাহিনী গ্রেহাউন্ডস-এর প্রধান থাকাকালীন সজ্জনারের নেতৃত্বেই এক তথাকথিত সংঘর্ষে মারা যায় মাওবাদী জঙ্গিনেতা তথা একাধিক অপহরণ, তোলাবাজি, জমি দখল ও হত্যায় অভিযুক্ত কুখ্যাত দুষ্কৃতী মহম্মদ নঈমুদ্দিন। এ দিন ভোরে শাদনগরে পুলিশবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হায়দরাবাদ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের মৃত্যুতে আবার সজ্জনারের দক্ষতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তেলেঙ্গানাবাসী থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকীরারা। আবেগের আতিশয্যে তাঁর ছবিতে দুধ ঢেলে স্নান করাতে দেখা গিয়েছে তেলেঙ্গানায়। শাদনগরবাসী তাঁর ওপর ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে সজ্জনারকে ‘সুপার কপ’ আখ্যা দিয়েছেন।বিজয়ওয়াড়ার বাসিন্দা শামশাদ বেগম তো সাফ বলেই দিয়েছেন, ‘সজ্জনারকে অভিনন্দন। ১০ বছর আগে তিনি বিজয়ওয়াড়ার দায়িত্বে থাকলে আমার মেয়েও সুবিচার পেত।’ ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শামশাদের মেয়ে বছর উনিশের ফার্মেসি ছাত্রীকে হস্টেলের ভিতরে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়।তবে এত অভিনন্দন ও শুভেচ্ছার মাঝেও সজ্জনারের কাজে আপত্তি জানিয়েছেন কেউ কেউ। হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক জি হরগোপাল যেমন বলেছেন, ‘পুলিশ কখনই অতিরিক্ত বিচার বিষয়ক কর্তৃপক্ষ হয়ে উঠতে পারে না। কোনও অপরাধীকে শাস্তি দিতে গিয়ে কোনও পুলিশ অফিসার কখনও আর একটা অপরাধ সংগঠিত করতে পারেন না।’