সারাক্ষণ মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকতেন বছর উনিশের এক তরুণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে গেম খেলার জন্য হয় শুয়ে থাকতেন তিনি, অথবা বসে সামনের দিকে ঝুঁকে মোবাইল ঘাঁটতেন। যার ফল হল মারাত্মক। দিল্লির এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই তরুণ একইসঙ্গে দু'টি জটিল অসুখে আক্রান্ত। যার মধ্যে একটি হল - স্পাইনাল টিউবারকিউলোসিস বা মেরুদণ্ডের যক্ষ্মা এবং অন্যটি হল - কাইফোস্কোলিয়োসিস (যা একটি বিরল অসুখ)।
কাইফোস্কোলিয়োসিসের ফলে ওই তরুণের মেরুদণ্ড বেঁকে গিয়েছে। সেটিকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে একের পর এক জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রপচার করতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। পাশাপাশি, ওই তরুণের যক্ষ্মার চিকিৎসাও চলছে। সেটিও যথেষ্ট জটিল।
ইন্ডিয়ান স্পাইনাল ইনজুরিজ সেন্টার (আইএসআইসি)-এর স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা ওই তরুণের চিকিৎসা করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কাইফোস্কোলিয়োসিসে আক্রান্ত হলে মেরুদণ্ড আর সোজা থাকে না। সেটি যেকোনও একটি দিকে বেঁকে যেতে শুরু করে। সেটা সামনের অথবা পিছনের দিকে হতে পারে, অথবা ডানদিক কিংবা বাঁদিকে।
ওই তরুণের চিকিৎসা চলাকালীনই তাঁর মেরুদণ্ডের স্ক্যান করা হয়। তাতে ধরা পড়ে, তাঁর মেরুদণ্ডের ডি১১ ও ডি১২ কশেরুকায় যক্ষ্মার জীবাণু মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস বাসা বেঁধেছে!
চিকিৎসকরা বলছেন, যাঁরা শারীরিক কসরত সেভাবে করেন না, সারাদিন শুয়ে বসে কাটান, অথবা দীর্ঘ সময় ধরে কোনও একদিকে ঝুঁকে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের কাইফোসিস বা কাইফোস্কোলিয়োসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও, মেরুদণ্ডে আঘাত, পেশির গঠনগত ত্রুটির কারণেও এই অসুখ হতে পারে। যেহেতু এখনকার দিনে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল নিয়ে কাটায়, তাই তাদের এই ধরনের বিরল অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।
কারণ, তারা হাঁটাহাঁটি, শরীরচর্চা না করে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে অথবা মোবাইলে চোখ এঁটে সারাদিন বসে থাকে। এতে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কাইফোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আর, একবার যদি এই অসুখ হয়, তাহলে স্বাভাবিক জীবনযাপন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেমন - একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলাও করা যাবে না। ওঠা, বসা করতে সমস্যা হবে। শরীর ক্রমশ সামনের দিকে ঝুঁকে যাবে। এর সঙ্গে যদি খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম করা হয়, তাহলে সমস্যা আরও বাড়বে।
অন্যদিকে, স্পাইনাল টিউবারকিউলোসিস বা মেরুদণ্ডের যক্ষ্মাও খুব বিপজ্জনক একটি অসুখ। মেরুদণ্ড ছাড়াও কোমর, গোড়ালি, পিঠ ইত্যাদি শরীরের যে কোনও হাড়ে বা অস্থিসন্ধিতে যক্ষ্মার জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই স্থানে প্রদাহ শুরু হয়।