সম্প্রতি ইউকো ব্যাঙ্কে এক ধাক্কায় ৮২০ কোটি টাকার গরমিল হয়েছিল অনলাইন লেদনেন ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে। এদিকে এবছরে ১১ মাসে অনলাইন জালিয়াতির পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হয়েছে। গতবছর এই পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
অনলাইন লেনদেনে জালিয়াতি নিয়ে বৈঠক করবে কেন্দ্র
অনলাইন লেনদেনে ত্রুটি নিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে কয়েকদিন আগেই সাবধান করে সরকার। আর এবার এই ইস্যুকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এবং ট্রাই-এর সঙ্গে বৈঠক করবে সরকার। জানা গিয়েছে, ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস দফতরের সচিব বিবেক যোশী এই বৈঠক করবেন। এর আগে সম্প্রতি সংসদীয় কমিটি এই বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকের আধিকারিক এবং পিএনপি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউকো ব্যাঙ্কে এক ধাক্কায় ৮২০ কোটি টাকার গরমিল হয়েছিল অনলাইন লেদনেন ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণে। এদিকে এবছরে ১১ মাসে অনলাইন জালিয়াতির পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হয়েছে। গতবছর এই পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তার থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ জালিয়াতি বেড়েছে। তবে সাম্প্রতিক এই বৈঠকে মূলত ইউকোর ঘটনা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। (আরও পড়ুন: আচমকাই ইউপিআই আইডি অচল হবে বহু মানুষের, পেমেন্ট অ্যাপগুলিকে নির্দেশ NPCI-এর)
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ইউকোর অনেক গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ভুল করে টাকা ঢুকেছিল। জানা যায়, ইমিডিয়েট পেমেন্ট সিস্টেম বা আইএমপিএস-এ গলদ থাকার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। মোট ৮২০ কোটি টাকা ভুল করে অন্যের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে অধিকাংশ টাকাই নাকি ব্যাঙ্ক ফেরাতে সক্ষম হয়েছে। তবে এখনও প্রায় ১৭১ কোটি টাকা ফেরাতে অক্ষম হয়েছে ইউকো। এই পরিস্থিতিতে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয় ইউকোর তরফ থেকে। ব্যাঙ্কটি কলকাতা ভিত্তিক হওয়ায় কলকাতা পুলিশেই এফআইআর করা হয়েছে।
শেয়ার বাজারে জমা দেওয়া এক ফাইংলিংয়ে ইউকো ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ভুল করে 'গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ভুল ভাবে' ক্রডিট হয়েছে ৮২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে থেকে ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক ৬৪৯ কোটি টাকা ফেরাতে সক্ষম হয়েছে। যা এই মোট অর্থের প্রায় ৭৯ শতাংশ। তবে এখনও প্রায় ১৭১ কোটি টাকা ভুল অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে ইতিমধ্যেই ইমিডিয়েট পেমেন্ট সিস্টেম বা আইএমপিএস স্থগিত করেছে কলকাতা ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ইউকো। জানা গিয়েছে, গোলযোগের জেরেই বুধবার আইএমপিএস ট্রান্সফার বন্ধ করতে বাধ্য হয় ইউকো ব্যাঙ্ক। শেয়ার বাজারের এক ফাইলিংয়ে ইউকো জানায়, অন্য কোনও ব্যাঙ্কের গ্রাহরকা ইউকো ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের আইএমপিএস-এর মাধ্যমে টাকা পাঠালে সেই লেনদেন 'বাতিল হয়ে গিয়েছে' বলে বার্তা আসছে। তবে যে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হচ্ছে, তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাচ্ছে। আবার যে টাকা পাঠাচ্ছে, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটলেও তা আবার ফিরে যাচ্ছে। এই আবহে একই টাকা দু'বার দু'জনের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে।
জানা যায়, গত ১০ থেকে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে এই ঝামেলা দেখা যায়। এই আবহে বুধবার বন্ধ করে দেওয়া হয় আইএমপিএস ট্রান্সফার ব্যবস্থা। জানা যায়, ইউকো ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের আইএমপিএস-এর মাধ্যমে টাকা পাঠালে তা ইউকোর সেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে, তার সঙ্গে যে টাকা পাঠাচ্ছে, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটছে না। বা টাকা কাটলেও আবার তা ফেরত চলে আসছে। এই আবহে ইউকো ব্যাঙ্কের তরফ থেকে বিবৃতি প্রকাশ করে শুধু বলা হয়েছে, 'সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে আপাতত ব্যাঙ্ক আইএমপিএস চ্যানেলটিকে অফলাইন করে দিয়েছে। এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সকলের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা করছে ব্যাঙ্ক। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবং তারপরই ফের নতুন করে চালু করা হবে আইএমপিএস ট্রান্সফার। পুলিশকে ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারাও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।'