গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছেন ২৬ জন নিরীহ ভারতীয়। জঙ্গিদের বুলেটে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাওয়ার ভয়ে তখন যে যেদিকে পারেন ছুটছেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল স্থানীয় যুবক সইদ আদিল হুসেন শাহ। পেশায় টাট্টু ঘোড়ার চালক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাকিদের বাঁচাতে এক জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন সইদ। কিন্তু সাহস দেখাতে যাওয়াই কাল হল। পরিণামে প্রাণ হারাতে হল তাঁকে। কিন্তু অনন্তনাগের বাসিন্দা সইদের মৃত্যুতে গর্বিত তাঁর বাবা। (আরও পড়ুন: বাংলার বিএসএফ জওয়ানের রাত কাটল পাকিস্তানে, অভিনন্দন পর্বের ভুলের পথে ইসলামাবাদ?)
আরও পড়ুন-পহেলগাঁওয়ে নিরাপত্তায় গলদ! পর্যটকদের নিরাপত্তায় ৪ নিরস্ত্র রক্ষী, উঠছে প্রশ্ন
বাড়ির একমাত্র রোজগেরে ছিল সইদ। কিন্তু আচমকা তাঁর মৃত্যু এরপর কী হবে, কীভাবে সংসার চলবে, তা জানে না পরিবার। কিন্তু মনে একটাই শান্তি, ছেলে দেশের মানুষকে বাঁচাতে, তাঁদের স্বার্থে প্রাণ দিয়েছে। বার্তাসংস্থা এএনআইকে সইদের বাবা হায়দার শাহ বলেন, 'ওর জন্য গর্বিত আমি। সেটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এখনও। নাহলে আমার জোয়ান ছেলের মৃতদেহ দেখে, ওর মুখ দেখে আমিও ওইখানেই মারা যেতাম হয়তো। ওর মতো বাহাদুর ছেলের জন্যই বোধহয় আমি বেঁচে আছি এখনও। ও যে নিজের প্রাণ দিয়েও কিছু মানুষকে বাঁচিয়েছে, এটা জেনেই আমার মাথা উঁচু হয়ে যাচ্ছে গর্বে।' তিনি আরও বলেন, 'সন্ধ্যা ৬টার দিকে জানতে পারি যে আমার ছেলে এবং খুড়তুতো ভাই হাসপাতালে আছে। যারা সইদকে খুঁজতে গিয়েছিল তারা আমাকে ঘটনাটি সম্পর্কে জানিয়েছিল।' (আরও পড়ুন: মার খাওয়ার জন্যে নিশপিশ করছে পাকিস্তান? শীঘ্রই শখ পূরণ করতে পারে ভারত)
আরও পড়ুন: ফাঁস পাক মন্ত্রীর জঙ্গি প্রেম, পহেলগাঁওয়ের হিন্দু নিধনকারীদের নিয়ে বলে ফেললেন...
অন্যদিকে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত সইদের মা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, 'সে প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করত। আমরা সন্ধ্যায় চাল কিনে একসঙ্গে খেতাম। এখন কে খাবার আনবে? কে ওষুধ আনবে?' সইদের বোন রবিসা বলেন, 'সেদিন দাদার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল। সে বলেছিল শরীর ভালো নেই এবং একদিন ছুটি নেবে। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। সে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। তিনটে গুলি তার বুকে লাগে।' জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও সইদের আত্মত্যাগের জন্য গর্বিত বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, 'সইদ সন্ত্রাসবাদীদের থামানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং একজন সন্ত্রাসীর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন, তাই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।' কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের পরিবারটির দায়িত্ব নিতে হবে এবং তাদের সাহায্য করতে হবে। আমি তাদের এই আশ্বাস দিতে এসেছি যে সরকার এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে আছে এবং আমরা তাদের জন্য যা করতে পারি, করব।'
আরও পড়ুন: পহেলগাঁও কাণ্ডে 'ব্যর্থতা স্বীকার' কেন্দ্রের, সর্বদল বৈঠকে শাহ সোজাসুজি বললেন…
প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার ভোরেও টাট্টু ঘোড়াটিকে নিয়ে বৈসরন উপত্যকায় গিয়েছিলেন সইদ আদিল হুসেন শাহ। সাড়ে তিনটে নাগাদ গুলি চলার আওয়াজ আর মানুষের চিৎকার উপত্যকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মারা যাওয়ার আগে বাড়ির সঙ্গে শেষ কোনও কথা হয়নি সইদের। তাঁকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। সাড়ে চারটে নাগাদ যখন তাঁর ফোনে রিং হতে থাকে, পরিবার ভেবেছিল তাহলে বোধ হয় সইদ নীচে নামছে উপত্যকা থেকে। কিন্তু হামলার খবর পাওয়ার পরেই তাঁর পরিবার থানায় এবং পরে হাসপাতালে ছুটে যায়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। সে ছুটে গিয়ে কেড়ে নিতে চান জঙ্গির হাতের বন্দুক। তখনই হয় হাতাহাতি। আর তার জেরে বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারান তিনি।