ন্যাশনাল হেরাল্ড অর্থ পাচার মামলায় কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীকে তাৎক্ষণিক নোটিশ জারি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দিল্লি একটি আদালত।কারণ হিসেবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কর্তৃক জমা দেওয়া প্রয়োজনীয় নথির অভাবের কথা উল্লেখ করেছে আদালত।ফলে কার্যত স্বস্তি পেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় সংস্থার আবেদনের শুনানি করছিল দিল্লির আদালত। সেখানে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে পিএমএলএ-র বিধান অনুসারে, অভিযুক্তের বক্তব্য না শুনে অভিযোগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া যায় না। তাই সংস্থার চার্জশিটের অধীনে, সনিয়া এবং রাহুল গান্ধীকে যথাক্রমে এক এবং দুই নম্বর অভিযুক্ত হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালতে ইডি জানায়, 'এই আদেশ দীর্ঘায়িত হোক তা চাই না। বরং নোটিশ জারি করা হোক।' কিন্তু বিশেষ বিচারক বিশাল গোগনে বলেছেন, 'আদালত ইডির প্রমাণে এখনও সন্তুষ্ট নয়। আদালতের রেকর্ড রক্ষক যেভাবে উল্লেখ করেছেন তাতে চার্জশিটে কিছু নথি অনুপস্থিত রয়েছে। ইডিকে সেই নথিগুলি দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আদালত নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত নেবে।' জবাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা জানায়, 'আমরা কিছুই গোপন করছি না। বিচারের আগে শুধু তাদের পক্ষ উপস্থাপনের সুযোগ দিচ্ছি।' কিন্তু আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, অভিযোগপত্রে কিছু ত্রুটি দূর করতে এবং অভিযুক্তদের নোটিশ জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও প্রাসঙ্গিক নথি জমা দিতে হবে সংস্থাটিকে।
আরও পড়ুন-পাকিস্তানে কূটনৈতিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক! ব্যাপক ধস শেয়ার বাজারে, উধাও ১০ লক্ষ কোটি
গান্ধীদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
সনিয়া এবং রাহুল গান্ধী ছাড়াও কগ্রেসের ওভারসিজ ইউনিটের প্রধান শ্যাম পিত্রোদার এবং ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড (ওয়াইআই) এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সুমন দুবের নাম রয়েছে ইডির চার্জশিটে। সনিয়া এবং রাহুল একইসঙ্গে এই কোম্পানির ৭৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক। ইডি-র অভিযোগ, গান্ধী পরিবারই ওয়াইআই-এর আসল সুবিধাভোগী। কোম্পানিটি ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের মূল কোম্পানি অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড-এর সম্পত্তি মাত্র ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দখল করেছে বলে অভিযোগ। ইডির মতে, সেই সময়ে এই সম্পত্তির মূল্য ছিল ২,০০০ কোটি। বর্তমানে এর মূল্য প্রায় ৫,০০০ কোটি। ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, তারা মোট ৯৮৮ কোটি টাকার অবৈধ আয় সম্পর্কে জানতে পেরেছে। এর মধ্যে রয়েছে ৭৫৫ কোটি মূল্যের রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য সম্পত্তি, ৯০ কোটি মূল্যের শেয়ার এবং ১৪২ কোটি টাকার ভাড়া। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে ওয়াইআই কোম্পানিটি দখল করার পর থেকে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড দিল্লি, মুম্বই, ইন্দোর, পঞ্চকুলা, লখনউ এবং পাটনার মতো শহরে তাদের সম্পত্তি থেকে ভাড়া আদায় করেছে।
আরও পড়ুন-পাকিস্তানে কূটনৈতিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক! ব্যাপক ধস শেয়ার বাজারে, উধাও ১০ লক্ষ কোটি
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ জুন নয়া দিল্লির মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পাটিয়ালা হাউস কোর্টের জারি করা নির্দেশের ভিত্তিতে ২০২১ সালে ইডি এই মামলার তদন্ত শুরু করে। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন, যার ভিত্তিতে এই তদন্ত শুরু হয়।সম্প্রতি ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর ৬৬১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইডি।চলতি মাসেই দিল্লি, মুম্বই ও লখনউয়ের রেজিস্ট্রি অফিসগুলিকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত সংক্রান্ত নোটিস পাঠানো হয়। এই শহরগুলিতেই এজেএলের বিতর্কিত সম্পত্তিগুলি অবস্থিত।এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ইডি দিল্লি, মুম্বই ও লখনউতে মোট ৬৬১ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি এবং ৯০.২ কোটি টাকার এজেএল শেয়ার প্রাথমিকভাবে বাজেয়াপ্ত করে।