সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে।বৃহস্পতিবার কম্বোডিয়ার একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। উভয় দেশই এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই উত্তেজনায় ইতিমধ্যে এক শিশুসহ অন্তত ৯ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন।
থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এফ-১৬ বিমান দিয়ে কম্বোডিয়ার একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গুলি ছোড়া হয়েছে এবং তা ধ্বংস করা হয়েছে। দুই দেশই বৃহস্পতিবার ভোরে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে।থাই সেনাবাহিনীর উপ-মুখপাত্র রিচা সুকসুয়ানোন বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান শক্তি ব্যবহার করেছি।’ একইসঙ্গে থাইল্যান্ড তাদের কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়ে, থাই যুদ্ধবিমান দুটি বোমা ফেলে একটি রাস্তায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘থাইল্যান্ড কর্তৃক কম্বোডিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর এই বেপরোয়া ও নির্মম সামরিক আগ্রাসনের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
থাইল্যান্ড বুধবার রাতেই কম্বোডিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে এবং ব্যাঙ্ককে কম্বোডিয়ান দূতকে বহিষ্কার করার ঘোষণা করেছে। এর আগে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরও একজন থাই সেনা ল্যান্ডমাইন্ড বিস্ফোরণে পা হারান। থাইল্যান্ড দাবি করেছে, ল্যান্ডমাইন্ডটি সাম্প্রতিক সময়ে কম্বোডিয়া পুঁতে রেখেছে।থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, কম্বোডিয়ান সেনারা বৃহস্পতিবার সকালে থাই সামরিক ঘাঁটির ওপর ‘ভারী কামান হামলা’ চালিয়েছে এবং একটি হাসপাতালসহ বেসামরিক এলাকাও টার্গেট করেছে, যাতে সাধারণ নাগরিকের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।এক বিবৃতিতে থাই সরকার জানায়, ‘যদি কম্বোডিয়া আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে সশস্ত্র আক্রমণ চালাতে থাকে, তাহলে থাইল্যান্ড আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ জোরদার করতে প্রস্তুত।’ থাইল্যান্ডের সুরিন সীমান্ত প্রদেশে বাসিন্দারা বালির বস্তা ও টায়ার দিয়ে তৈরি করা কংক্রিটের বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে, কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রক থাইল্যান্ডের বিমান হামলাকে ‘উস্কানিমূলক ও অযৌক্তিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং থাই বাহিনীকে সীমান্ত থেকে প্রত্যাহার করে নিতে ও ভবিষ্যতে এমন উত্তেজনাকর আচরণ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয় বৃহস্পতিবার ভোরে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত তা মোয়ান থম মন্দির সংলগ্ন একটি এলাকায়।থাইল্যান্ডের সিসাকেট প্রদেশে একটি পেট্রোল স্টেশনে আগুন ধরে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ঘন কালো ধোঁয়া উড়ছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে ছুটে আসেন।সেখানে ছয়জন নিহত ও ১০ জন আহত হন বলে সেনাবাহিনী জানায়। আরেকজন উবন রাতচাথানি সীমান্ত প্রদেশে মারা যান।
থাই সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘থাই সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। আমরা আমাদের জনগণ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত।’তারা আরও জানায়, কম্বোডিয়া একটি নজরদারি ড্রোন মোতায়েনের পর মোয়ান থম মন্দির এলাকায় ভারী অস্ত্রসহ সেনা পাঠায় থাইল্যান্ড। সেখানে কম্বোডিয়ান সেনারা গুলি ছোড়ে এবং এতে দুই থাই সেনা আহত হন। কম্বোডিয়া রকেট লঞ্চার-সহ নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলেও দাবি করা হয়।তবে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র বলেন, থাই সেনারা বিনা উসকানিতে সীমান্তে প্রবেশ করেছিল এবং ক্যাম্বোডিয়ান বাহিনী আত্মরক্ষার্থে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, ‘পরিস্থিতি সংবেদনশীল। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করব।’