মঙ্গলবার দুপুরে আছড়ে পড়তে চলেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম। তার আগে সোমবার তাণ্ডব চলল চেন্নাই-সহ আশপাশের এলাকায়। এতটাই বৃষ্টি হয়েছে যে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তামিলনাড়ুর রাজধানী। ভেসে গিয়েছে রাস্তা। কোমর ছাড়িয়েছে জল। একই অবস্থা চেন্নাই বিমানবন্দরের। শুধু চেন্নাইয়েই পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু'জনের। একজনের উপরে গাছ পড়ে যায়। সেইসঙ্গে শহরের দুটি পৃথক এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলা এবং এক পুরুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চেন্নাইয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে ভারতীয় সেনার মাদ্রাজ ইউনিট। মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও (এনডিআরএফ)।
চেন্নাইয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে ২০১৫ সালের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসছে। লাগাতার বৃষ্টির জেরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে পুরো শহর। নদীতে পরিণত হয়েছে শহরের বিভিন্ন রাস্তা। কোথাও জল দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও আবার জলের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। না বলে দিলে মনে হবে যেন বয়ে যাচ্ছে কোনও নদী। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে উপড়ে গিয়েছে গাছ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে যে জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে গাড়ি। কোথাও গাড়ি আটকে আছে। লাগাতার বৃষ্টির জেরে সোমবার সকাল থেকেই একাধিক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ইন্টারনেট সংযোগ মেলেনি। কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসে থাকার মতো অবস্থা হয়েছে অধিকাংশ মানুষের। শুধু তাই নয়, একটি ভাইরাল ভিডিয়োয় রাস্তায় কুমির ঘুরে-বেড়াতে দেখা গিয়েছে।
পেরুনগুডির এক বাসিন্দা বলেন, ‘ভোর তিনটে থেকে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। জল জমে যাওয়ার কারণে কারেন্ট চলে গিয়েছে। পরে আরও জল জমে যাওয়ায় জেনারেটরও বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১১টা থেকে বিদ্যুৎ নেই। এখনও বিদ্যুৎ আসেনি।’ একইসুরে অশোকনগরের বাসিন্দা সন্দীপ গুপ্তা বলেন, ‘বাইরের অবস্থা খুব খারাপ। প্রচুর গাছ পড়ে গিয়েছে। অশোকনগরের ১১ অ্যাভিনিউ রোডে পুরো জল জমে গিয়েছে। অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ নেই।'
আবহাওয়ার দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় পেরুনগুডি-সহ একাধিক জায়গায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার স্কুল-সহ যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্কের মতো জায়গায় ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। যে যে জায়গা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, সেখানে বেসরকারি অফিসগুলিকে প্রয়োজনে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও আপাতত যা অবস্থা, তাতে প্রচুর মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ নেই। ফলে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-রও কোনও প্রশ্ন ওঠে না।
আর সেই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই যান চলাচল পুরোপুরি থমকে গিয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে চেন্নাই বিমানবন্দর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একাধিক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে যে চেন্নাইয়ের বিমানবন্দরে পুরো জলের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কোনওক্রমে বিমান সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, সকাল ৯ টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চেন্নাই বিমানবন্দর বন্ধ ছিল। প্রায় ৭০টির মতো বিমান বাতিল করা হয়েছে। একাধিক দূরপাল্লার ট্রেনও বাতিল করে দিয়েছে ভারতীয় রেল। যে তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ট্রেন আছে।
আরও পড়ুন: Cyclone Michaung : ল্যান্ডফলের আগেই তাণ্ডব শুরু প্রবল ঘূর্ণিঝড়, মিগজাউমের বলি ২, জারি ১৪৪ ধারা