আজ, ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' প্রকাশের কথা ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। তবে গতরাতে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিপ্লবের ঘোষণাপত্র তারা প্রকাশ করবে। এরই মাঝে এবার বিস্ফোরক অভিযোগ করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ। উল্লেখ্য, গতকাল গভীর রাতে সরকারের তরফ থেকে যখন মুখ্য উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান যে সরকারই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে, তখন বৈঠকে ব্যস্ত ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সেই বৈঠক শেষে ছাত্রনেতারা জানিয়ে দেয়, তারা ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে না। আজ বরং তারা 'ইউনিটি মার্চ' করবে। এরই সঙ্গে আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক দলিল যাতে আমরা উপস্থাপন না করতে পারি, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।' (আরও পড়ুন: ১ জানুয়ারি থেকে UPI, FD থেকে পেনশনের নিয়মে পরিবর্তন! সঙ্গে বাড়বে গাড়ির দামও)
আরও পড়ুন: ফের পারদ নামতে পারে কলকাতায়? বাংলায় ঠান্ডার আমেজ থাকবে ক'দিন?
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার অভিযোগ, তাদের এই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঠেকাতে দেশের পশাপাশি বিদেশি ষড়যন্ত্রও হয়েছে। তবে তিনি বলেন, 'ঘোষণাপত্রের বিষয়ে সরকার সম্মতি দিয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক জয়।' এরপর তিনি জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনরে একত্রিত হবেন। তাঁর বক্তব্য, সরকার ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে বলে আমরা আমাদের কর্মসূচি বাতিল করব না। আমরা একত্রিত হব। (আরও পড়ুন: এবারে কত শতাংশ হারে বাড়তে পারে সরকারি কর্মীদের ডিএ? বছর শেষে সামনে এল যে তথ্য…)
আরও পড়ুন: দেশের ৩১ জন CM-এর মধ্যে দরিদ্রতম তিনি, জানেন এহেন মমতার মোট সম্পত্তি কত?
এর আগে গতকাল গভীর রাতে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে সরকার নিজেই। জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে সেই ঘোষণাপত্র। এই নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, 'আমরা আশা করছি, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে তা উপস্থাপন করা হবে।' তিনি জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে।
চলতি বছরে জুলাই-অগস্টে বাংলাদেশে যে হাসিনা বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, তা গণঅভ্যুত্থানের আকার নিয়েছিল। সেই 'বিপ্লব' নিয়ে অবশ্য ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সামনে এসেছে একের পর এক। প্রাথমিক ভাবে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সদস্যদের 'কোটা' দেওয়ার বিরুদ্ধে। মোট ৯ দফা দাবি সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল পড়ুয়ারা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোড় অবশ্য ঘুরে যায় জুলাইয়ের শেষের দিকে। তখন আন্দোলন শুরু হয় '১ দফার দাবিতে' - হাসিনার পদত্যাগ। ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। তবে কেন ৯ দফায় শুরু হওয়া আন্দোলন পরিণত হয়েছিল 'হাসিনা বিরোধী বিক্ষোভে'? এই নিয়ে প্রশ্নের আবহেই ৩১ ডিসেম্বর 'বিপ্লবের ঘোষণা' করার ঘোষণা করেছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারি সহ অনেক ছাত্রনেতা একযোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন এই নিয়ে। পরবর্তীতে সরকার জানিয়েছিল, এই ঘোষণাপত্রের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। এনকী বিএনপি এই ঘোষণাপত্র নিয়ে 'ধীরে চলো' নীতি গ্রহণ করেছিল। তবে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের আগের রাতেই বড় ঘোষণা করে বসল ইউনুসের সরকার। আর তাতে বদলে গেল পরিস্থিতি।