ঠিক এক বছর আগে এক লহমায় বদল গিয়েছিল জীবন। পুলওয়ামায় শহিদ হয়েছিলেন স্বামী। সেই ধাক্কার মধ্যেই ঠিক করেন, স্বামীর মতো সেনায় যোগ দেবেন। সেইমতো পরীক্ষায় পাশ করেন। আর কিছুদিন পরই ভারতীয় সেনার যোগ দিতে চলেছেন বছর ২৮-এর নিতিকা কউল ধূনদিয়াল।
গত বছর পুলওয়ামা হামলার পর জইশ জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হয়েছিলেন মেজর বিভূতি শংকর ধূনদিয়াল। তারপর নিতিকা সিদ্ধান্ত নেন, আদ্যোপান্ত কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে স্বামীর পথেই হাঁটবেন। যোগ দেবেন সেনায়।
আদতে কাশ্মীরের বাসিন্দা নিতিকা শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় সফল হন। ইন্টারভিউতেও সফল হয়েছেন। আপাতত মেধাতালিকা প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। তারপর যোগ দেবেন সেনায়। বলে উঠবেন, 'আই অ্যাম নিতিকা কউল, ক্যাডেট, ইন্ডিয়ান আর্মি।'
সেই পথচলাটা অবশ্য একেবারেই সহজ ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর দুনিয়াটা ভেঙে পড়েছিল নিতিকার। কিছুই ভালো লাগত না। বাইরে বেরোতেন না। কিছুদিন পর অবশ্য পর বেরোন পরিবারের এক সদস্যের সঙ্গে। বোঝান নিজেকে। নিতিকার কথায়, 'ভিতর থেকে যেন একটা বাধা আসছিল। আমার বাইরে যেতে পুরোপুরি ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আপনার ভালোবাসার মানুষ যখন ছেড়ে যান, তখন ভাবতে হবে তিনি কি আপনাকে দুঃখের মধ্যে দেখতে চান! আমি সবসবয় ভাবতাম, বিভু আমার থেকে কী চায়। আমি আমার উত্তর পেয়ে যাই।'
বর্তমানে বাবা-মা'র সঙ্গে দিল্লিতে থাকেন নিতিকা। সেখানে একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেকে আরও কাজের মধ্যে ডুবিয়ে দেন নিতিকা। তাঁর কথায়, 'স্বামীর মৃত্যুর ১৫ দিন পর আমি কাজ যোগ দিই। কারণ আমি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাইছিলাম। ভেঙে পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনাকে সেই পরিস্থিতিটা মেনে নিতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে আমায় ইতিবাচক দিক খুঁজতে হত ও নিজের পায়ে আবারও দাঁড়াতে হত।'
সেইসবের মধ্যে জীবন সম্পর্কে আরও বুঝতে পারেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেন, স্বামীর পথেই দেশের সেবায় নিয়োজিত হবেন। নিতিকার কথায়, 'এত বড় ধাক্কা সামলাতে আমি সময় নিয়েছিলাম। শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত ধাপে ধাপে হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে সেই পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করাটাই বড় সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু স্বামীর মতো একই পথে হাঁটতে চেয়েছি আমি।'
সিদ্ধান্তটা তো নিয়েছিলেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা যে কঠিন ছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে ভাবতে থাকেন, তাঁর স্বামীও একদিন এরকম কোনও এক কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন। সেদিন কীরকম মনের অবস্থা ছিল তাঁর 'বিভূ'-র। সেইসব ভাবতে ভাবতে পরীক্ষা দেন। নিতিকা বলেন, 'পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকার বিষয়টা আমার কাছে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ছিল। আমি কীরকম অনুভব করছিলাম সেই বিচারে। সেই সময় ভাবছিলাম আমার স্বামীও এরকম পরিস্থিতি দিয়ে গিয়েছেন। সেনায় যোগ প্রথম ধাপ হিসেবে পরীক্ষায় পাশ করা..এটা আমায় বিভূর কাছে রয়েছি বলে অনুভব করায়।'
নিতিকা জানান, সেনা যোগ দেওয়াটাই স্বামীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হবে। তিনি বলেন, 'আমি নতুন জিনিস শিখতে চাই। কারণ এটা আমার জন্য এটা বড় পরিবর্তন। কর্পোরেট সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত ছিলাম আমি। সেখান থেকে সুরক্ষা বাহিনীর শৃঙ্খলাবদ্ধ সংস্কৃতিতে যোগ দেব।'