নক্ষত্র-গ্রহের প্রতি আলাদাই ভালোবাসা ছিল। আকাশের রহস্যময় জগত তাঁকে আকর্ষণ করত। টেলিস্কোপে চোখ রেখে মাঝেমধ্যেই হারিয়ে যেতেন সেই রহস্যময় জগতে। দেখতেন শনির বলয়, আরও কতকিছু। সেই টেলিস্কোপ, ফ্লাইট সিমুলেটরগুলি যেন সঙ্গীহীন। তাদের প্রিয় সুশান্ত সিং রাজপুত যে নেই আর।মেধাবী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সুশান্তের জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে বরাবরই আগ্রহ ছিল। মহাকাশচারী হতে চেয়েছিলেন। মহাকাশে গিয়ে পুরো সৌরজগতকে চাক্ষুষ করাই ছিল স্বপ্ন। কিন্তু চলে আসেন অভিনয়ে। নিজের প্রিয় মহাকাশ জাগতিক দৃশ্য বাড়িতে বসেই দেখার জন্য অ্যাপার্টমেন্টের ব্যালকনির সামনে রেখেছিলেন মিড ১৪'' এলএক্স৬০০। একটি ভিডিয়োতে জানিয়েছিলেন, টেলিস্কোপ দিয়ে এবার শনিবার বলয় দেখতে পাবেন তিনি। পাশের ঘরেই রাখা ছিল নাসার মহাকাশযানের রেপ্লিকা। আর দেওয়ালে টাঙানো স্পেসস্যুট পরা সুশান্তের ছবি। পুরনো জিনিসের প্রতি প্রবল টান ছিল সুশান্তের। লিভিংরুমে যত্ন করে নিজের ভলোবাসার জিনিসপত্র সাজিয়েছিলেন। তবে সুশান্তের সেটা খালি লিভিংরুম ছিল না, ছিল ‘টাইম ট্র্যাভেলিং রুম’। পুরনো, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে থাকতে ভালোবাসা সুশান্ত দেওয়ালে অনেক পুরনো ছবি ছিল। রাখা ছিল পুরনো কফি মগ-শিরস্ত্রাণ। সুশান্তের ঘরও কম আকর্ষণীয় ছিল না। দেওয়ালে অসাধারণ কারুকার্য সাজানো থাকত বই। সেগুলি পড়তেন। নিজেই জানিয়েছিলেন, এই ঘরই তাঁর ‘ভাবনা’-র জায়গা। স্টাডি টেবিলও একেবারে ঝকঝকে-তকতকে ছিল। নিজের পছন্দসই হলুদ রঙেই পড়াশোনার টেবিলকে রাঙিয়ে ছিলেন। সেখানেই বসে কখনও কম্পিউটার কোডিং নিজের ছোট্টো দুনিয়ায় সেভাবেই হাসিখুশি থাকতেন। এক সময়ের মুখচোরা ছেলেটার ওড়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল। সুশান্তের ছোট্ট পৃথিবীতে তাই অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল একটি ফ্লাইট সিমুলেটর। যা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলটদের জন্য ব্যবহার করা হয়। সেটি কেনার পর সুশান্ত ইনস্টাগ্রামে পোস্টও করেছিলেন। লেখেন, ‘#LovingMyDream ১/১৫০! ফ্লাইংয়ের লাইসেন্স পেয়েছি! এই অসামান্য সুন্দর (বোয়িং ৭৩৭ ফিক্সড বেস ফ্লাইট সিমুলেটরটা) কিনছি। নিজের ১৫০ টি স্বপ্নের মধ্যে প্রথমটিকে ভালোবাসা বা সেটার সঙ্গে বাঁচার জন্য - ওড়ার স্বপ্নের জন্য।’একইসঙ্গে বরাবর গাড়িরও শখ ছিল। ছেলেবেলায় নুডলসের প্যাকেটে মাসেরাতি কোয়াত্রোপোর্তে পেয়েছিলেন। সেদিন থেকেই সেই স্পোর্টসকার কেনার স্বপ্ন ছিল। তা পূরণও করেছিলেন। অ্যাপার্টমেন্টের গ্যারেজে রাখা ছিল স্বপ্নের গাড়ি। আর লিভিং রুমে যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছিলেন সেই ছোট্ট গাড়িটা। এছাড়াও ল্যান্ড রোভার রেঞ্জ রোভার এসইউভি এবং বিএমডব্লু কে ১৩০০ আর মোটরসাইকেল ছিলও সুশান্তের। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, সুশান্ত মোটামুটি ৫৯ কোটি টাকার মালিক ছিলেন। সিনেমাপিছু পাঁচ থেকে সাত কোটি নিতেন। আর সেই টাকা ছিল স্বপ্নপূরণের হাতিয়ার। সে স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছিলেন, যে প্যাশন নিয়ে জীবনে এগিয়ে এসেছিলেন, সেগুলি পূরণ করার। প্রথম ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল লুনার ল্যান্ডস রেজিস্ট্রি-র কাছ থেকে চাঁদে জমিও কিনেছিলেন। তাঁর আগে থেকে চাঁদে জমি জমি আছে একমাত্র শাহরুখ খানের। তবে তা এক অনুরাগী তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। সুশান্ত নিজে কিনেছিলেন। কিন্তু সেই টেলিস্কোপ, সেই ফ্লাইট সিমুলেটর, বাইক, গাড়ি, চাঁদের জমি - সবাই নিঃসঙ্গ, অভিভাবকহীন। সুশান্তই নেই যে…। আর সেই পূরণ না হওয়া স্বপ্নগুলিও হয়ত সুশান্তের খোঁজ করছে।