পশ্চিমবঙ্গের রূপকার উচ্চারণ করতেই অবিসংবাদিতভাবে উঠে আসবে তাঁর নাম। ডা.বিধানচন্দ্র রায়। দেশভাগের সময় যেভাবে রাজ্যের ভার তিনি যেভাবে সামলেছিলেন তা আজ ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। পাশাপাশি ধন্বন্তরি চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল দেশজোড়া। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেও নিয়মিত রোগী দেখতেন। বলা হত, রোগীর মুখে দেখে কিংবা কাশি শুনেই নাকি বলে দিতে পারতেন তাঁর শরীরে কী রোগ বাসা বেঁধেছে। এবার এই প্রবাদপ্রতিম মানুষটিকে নিয়েই তৈরি হতে চলেছে বায়োপিক। তবে একটি নয়। দু'দুটি! উদ্যোক্তাদের নাম? এসভিএফ এবং প্রযোজক রানা সরকার।কোনও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের বায়োপিক নিয়ে প্রযোজকদের মধ্যে 'লড়াই' এর ঘটনা এই প্রথম নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অজয় দেবগণ-কে নিয়ে 'ভগৎ সিং' এর বায়োপিক ঘোষণা করার প্রায় পরপরই ববি দেওলকে নিয়েও অন্য এক বলি-প্রযোজক ঘোষণা করেছিলেন 'ভগৎ সিং' এর বায়োপিক। এবং বাস্তবে তা রূপও পেয়েছিল। বক্স অফিসে এই দুই ছবির মধ্যে কে বেশি সফল হয়েছে, সে প্রশ্ন অবশ্য আলাদা। তবে দর্শক কিন্তু দু'টি ছবিই দেখেছিলেন।তবে জানিয়ে রাখা ভালো, ডা.বিধানচন্দ্র রায়-এর এই বায়োপিক নিয়ে বেশ কিছুদিন হল জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন বিখ্যাত ছবি নির্মাতা সংস্থা এসভিএফ। তবে যেহেতু সবটাই এখনও প্রস্তুতির স্তরে তাই সেই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি তাদের তরফে। হয়ত নতুন বছরে এই ছবির ঘোষণা করে দর্শকদের চমকে দিতে চাইছে তারা। ইন্ডাস্ট্রিতে জোর ফিসফাস, মুখ্যমন্ত্রী এবং ডাক্তারের হওয়ার পাশাপাশি ডা.রায়ের জীবনে ভালোবাসার অধ্যায় তথা তাঁর প্রেমিক স্বত্বাটিই নাকি মূলত এই ছবির উপজীব্য হতে চলেছে। বিধানচন্দ্র এবং কল্যাণী সরকারের প্রেম এই ছবির ভরকেন্দ্র। প্রবাদপ্রতিম ডাক্তার নীলরতন সরকারের কন্যা ছিলেন কল্যাণী।শোনা যায়, ডা.রায় এবং তাঁর মধ্যে গভীর প্রেম ছিল। কিন্তু তাঁদের বিয়েতে রাজি ছিলেন না ডা.নীলরতন সরকার স্বয়ং। কল্যাণীকেই ভুলতে না পেরে নাকি আর কোনওদিন সংসার করেননি ডা.রায়। একই ছবি ছিল কল্যাণীর ক্ষেত্রেও। পরবর্তী সময়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। তবে নিজের ভালোবাসাকে একমুহূর্তের জন্যেও ভোলেননি ডা.রায়। দেশভাগের পর উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে নদীয়া জেলায় যে নতুন টাউনশিপ গড়ে তুলেছিলেন, তার নাম দিয়েছিলেন 'কল্যাণী'। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ এর প্রথম দিকেই নাকি শুরু হয়ে যেতে পারে এই ছবির শ্যুটিং।অন্যদিকে, রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় এদিন বোমা ফাটিয়েছেন রানা সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, "বিধান রায়ের একটা প্রপার বায়োপিক আমরা বানাচ্ছি। অনেকদিন আগেই ফেসবুকে তার আভাস দিয়েছিলাম। শ্রীকান্ত ও মণিদা আমাদের বন্ধু , তাই এই প্রজেক্ট নিয়ে SVF-এর সাথে কোনো দ্বন্দ নেই...বরং একটা প্রতিযোগিতা থাকুক কে কতটা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে...এখন শুধু অপেক্ষা সৃজিত কবে সময় করে উঠতে পারে ওর ব্যস্ত সিডিউল থেকে, সেই মত আমরা প্ল্যান করবো...সঙ্গে থাকুন!" হিন্দুস্তান টাইমসের তরফে রানা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোনের ওপার থেকে তিনি বলেন, "আমার প্রযোজনায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'লহ গৌরাঙ্গ' ছবির কাজ শেষ হলেই ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের বায়োপিকের কাজ শুরু করে দেব। আমাদের ভাবনায় বিধান রায়ের চরিত্রে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য আর কল্যাণী সরকারের চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা সরকার"। সামান্য থেমে পরিষ্কার, কাটা কাটা ভাষায় তিনি জানান, " আরও একটা কথা। ডা.বিধানচন্দ্র রায় কিন্তু বাঙালির আবেগের অপর একটি নাম। তাই শুধুমাত্র তাঁর প্রেমের দিকটির কথা তুলে একটি আস্ত ছবি তৈরি করা উচিত নয় বলেই আমার মনে হয়। মনে রাখতে হবে , তিনি কিন্তু সামান্য কোনও ব্যক্তি নয়। তাই তাঁর বিষয়ে যা যা সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তোলা হবে তা যেন প্রামাণ্য হয়। এবং সেটাই দস্তুর। তাই আমি এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের ছবিতে কোনও 'সামান্য' বিধানচন্দ্র নয়, বরং 'প্রামাণ্য' বিধানচন্দ্র রায়কে উপস্থিত করব"।