রাজস্থানে প্রায় ৪,৫০০ বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন সন্ধান পেয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। গত প্রায় আড়াই বছর ধরে রাজস্থানের দীগ জেলার বাহাজ গ্রামে খননকার্য চালানো হচ্ছিল। তাতে প্রায় আটশোর বেশি ভূতাত্ত্বিক নির্দশন মিলেছে বলে দাবি পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের। খোঁজ মিলেছে প্রায় ২৩ মিটার গভীর একটি নদীর খাতেরও, যার সঙ্গে ঋগ্বেদের উল্লিখিত সরস্বতী নদীর যোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-র তরফে জানানো হয়েছে, এই নদীখাতটি প্রাচীন মানব বসতির জন্ম দিতে সাহায্য করেছিল এবং সরস্বতী অববাহিকা সংস্কৃতির সঙ্গে বাহাজকে যুক্ত করেছিল। এএসআই-এর খনন প্রধান পবন সরস্বত জানিয়েছেন, 'এই জলপ্রবাহের প্রমাণ সরস্বতী উপত্যকা, ব্রজ ও মথুরা অঞ্চলের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী ছিল, এটা প্রমাণ করে।' জানা গেছে, খননের সময় উদ্ধার হয়েছে ৮০০-র বেশি প্রত্নসম্পদ। তারমধ্যে রয়েছে প্রাচীন মৃৎপাত্র, ব্রাহ্মী লিপির আদিম সিলমোহর, তাম্র মুদ্রা, যজ্ঞ কুণ্ড, মৌর্য যুগের মূর্তি, শিব ও পার্বতীর মাটির মূর্তি, পশুর হাড় দিয়ে তৈরি সূচ, চিরুনি ও ছাঁচ।এই আবিষ্কার ভারতীয় উপমহাদেশে হাড়ের সরঞ্জাম ব্যবহারের অন্যতম প্রাচীন প্রমাণ।
আরও পড়ুন-কেরলের স্কুলগুলিতে জুম্বা সেশন! তীব্র বিরোধিতা মুসলিম সংগঠনগুলির
খনন কাজের সময় পাঁচটি ভিন্ন সময়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে রয়েছে হরপ্পার আগের যুগ, মহাভারত যুগ, মৌর্য যুগ, কুষাণ যুগ এবং গুপ্ত যুগ। মহাভারত যুগের স্তরে পাওয়া গেছে আয়তাকার ও গোল যজ্ঞ কুণ্ড, পোড়ামাটির পাত্র ও হবনের চিহ্ন। যা সেই সময়ের পূজা-পদ্ধতির সাক্ষ্য বহন করে। পাশাপাশি পাওয়া গেছে ১৫টিরও বেশি যজ্ঞ কুণ্ড, যা বেদ ও উত্তরবেদ যুগের ধর্মাচরণের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।এছাড়াও খননের সময় পাওয়া গেছে শিব-পার্বতীর পোড়ামাটির মূর্তি, যা শক্তি ও ভক্তি ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন।প্রায় ২৩ মিটার গভীরে পৌঁছনো এই খনন রাজস্থানে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গভীর প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান। এখানে পাওয়া গেছে মৌর্য যুগের মাদার গডেস-এর মূর্তির অংশ, গুপ্তযুগীয় স্থাপত্যে ব্যবহৃত কাদামাটির দেওয়াল ও স্তম্ভ এবং ধাতুবিদ্যার চুল্লি, যা তামা ও লোহার ব্যবহার নির্দেশ করে। এমনকি, একটি মানব কঙ্কালও পাওয়া গিয়েছে, যার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে ইজরায়েলে।
আরও পড়ুন-কেরলের স্কুলগুলিতে জুম্বা সেশন! তীব্র বিরোধিতা মুসলিম সংগঠনগুলির
এই আবিষ্কার শুধু রাজস্থান নয়, উত্তর ভারতের প্রাচীন ধর্ম, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সরস্বতী নদীর সম্ভাব্য অস্তিত্ব যেমন গবেষণার দিশা বদলাতে পারে, তেমনই মহাভারত থেকে মৌর্য, কুষাণ ও গুপ্ত যুগ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা তুলে ধরেছে বাহাজ গ্রাম।ইতিমধ্যেই এএসআই সংস্কৃতি মন্ত্রকে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই এলাকাকে ‘জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষিত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।