২০২৪ সালের ১৪ অগস্ট নিসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে জনগণের মনে। আরজি করের এক তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণকে কেন্দ্র করে পথে নেমেছিল গোটা বাংলা। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, ডাক্তার থেকে শুরু করে অটো-টোটো চালক, সব পেশার মানুষ এদিন পথে নামেন। শুধু মহিলারাই নয়, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে গলা তোলেন পুরুষরাও।
তবে যাদবপুরের রাত জমায়েতের অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা সামনে এসেছে। সেদিন ওখানে ছিলেন ইউটিউবার ঝিলম গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘মেয়েটি যাতে বিচার পায়, তাই রাতের রাস্তা দখল নামে একটা কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল। যাতে প্রথমে বলা হয়েছিল, তাতে শুধু মেয়েরাই অংশ নেবেন। এবং সেই কর্মসূচী হয়েওছে। এখানে ভাঙা গলায় বারবার একটা কথা ফিরে ফিরে এসেছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।’
‘এই কর্মসূচী দিয়ে মেয়েরা দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল, রাতের ৫-৬ ঘণ্টার রাস্তা দখলের অধিকার মেয়েদেরও আছে। এরপর কিছু পুরুষও তাতে সামিল হওয়ার আবেদন রাখল। কিছু মেয়ে রাজি ছিল না, কিছু মেয়ের মন গলে যায়, ‘আসুক না যারা আসতে চায়’। এবার বলি যাদবপুরের কথায়। আমার যা চোখে পড়েছে। যাদবপুরের মিছিলের কেন্দ্রে যখন পৌঁছলাম, যা টক্সিক মেসকুলিনিটি-র বিরুদ্ধে ডাকা, সেই টক্সিক ম্যাসকুলিনিটিই প্রচুর এসছে। ১০ লাখের মধ্যে ৭ লাখই ছেলে, ৩ লাখ মেয়ে।’, নিজের বক্তব্যে জোড়েন ইউটিউবার।
এরপর যাদবপুরে ঘটে যাওয়া কিছু অস্বস্তিকর ঘটনা উঠে এল তাঁর কথায়-
‘এটা যখন ঠিক হয়েছিল, তখন ঠিক হয় এটার দায়িত্বে পুরোভাগ থাকবে মেয়েরা। কিন্তু ছেলেরাই পুরোভাগে দায়িত্ব নিয়ে নিল। এক মেয়েকে দেখলাম বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে, সঙ্গে আরও দু চারটে ছেলে বন্ধু। আর ওরা এমন হাবভাব করছে, মেয়েটা ভীষণ অসহায়। মেয়েটাকে সামনে নিয়ে দু পাশে দুটো হাত দিয়ে সরে যান সরে যান বলে এগিয়ে দিচ্ছে। কার থেকে এই ভয়? যারা এলে মেয়েদের নিরাপত্তা নষ্ট হয়। সেই টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি।
এবার মিছিলে যখন খুব ভিড়। তখন দেখি খুব গন্ধ। সেটা মদের। আমরা যখন চিৎকার করে বলতে থাকলাম, কে মদ খেয়েছে? একটা ছেলে (জড়ানো গলায়) বলছে, এই কে মদ খেয়েছে রে! দেখলাম হাতে মদের বোতল।’
আমারই কিছু বন্ধুর সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছে মিছিলে থাকা কিছু ছেলের, যখন কথায় পারল না আমার বান্ধবীকে বলে গেল, ‘মেয়েছেলে হয়েছ বলে যা খুশি করবে ভেবে নিয়েছ…’!
মেয়েটার জন্য যদি একটুও কষ্ট থাকত, তাহলে এইট বি-র সামনের বিশ্ব বাংলার স্ট্যাচুর উপর বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে পারত না!’
সবশেষে আরও একটি ঘটনাও শেয়ার করেন ঝিলম। যখন ভোর পাঁচটা বাজতে আর মিনিটখানেক বাকি। ব্যারিকেডের সামনে কিছু লড়ি-বাইক দাঁড়িয়ে। একজন অনুরোধ করে ব্যারিকেড তুলে নিতে। আর তাতে এক মহিলা বলেন অনুরোধের সুরে, আর পাঁচটা মিনিট দাঁড়ান। সেই কথা বলে, তিনি পিছন ফিরতেই কোনও এক গাড়ির থেকে আওয়াজ আসে, ‘এরা তো টাকা নিতেই রাস্তায় নামে…’!