সদ্যসমাপ্ত কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলার নাম ফের উজ্জ্বল করল কলকাতার ছেলে সুমন সেন। এই মর্যাদাসম্পন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে আয়োজকদের স্বীকৃত কয়েকটি প্যারালাল বিভাগ থাকে। এরমধ্যেই অন্যতম ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট পরিচালিত ‘La Fabrique Cinéma de l’Institut Français' (লা ফ্রেবিক সিনেমা দে ইনস্টিটিউট ফ্রেঞ্চ)। বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাবান তরুণ তুর্কি পরিচালক অনন্য কাজকে স্বীকৃতি দিতেই এই উদ্যোগ। এবছর সারা বিশ্ব থেকে মোট ১০টি চিত্রনাট্য বেছে নেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে একটি কলকাতার ছেলে সুমন সেনের ‘একা’। ছবির ইংরাজি নাম ‘Solo’।
সুমনের এই স্বপ্নকে সফল করতে এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের আরিফুর রহমান (প্রয়োজনা সংস্থা গুপি বাঘা প্রোডাকশনস) এবং ফ্রান্সের ডমিনিক ওয়েলিনস্কি (ডিডব্লিউ প্রোডাকশনস)। সুমনের ছবির চিত্রনাট্য দেখে অভিভূত অনুরাগ কশ্যপ। এবার তিনিও প্রযোজক হিসাবে যুক্ত হয়েছেন এই প্রোজেক্টের সঙ্গে। সুমন সেনের অভিনব গল্পকে আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য অনুরাগের।
'একা' নিয়ে সূদূর কান থেকেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার মুখোমুখি হলেন পরিচালক সুমন সেন। কানের এই সাফল্যকে কতখানি বড় করে দেখছেন সুমন? মৃদু হেসে তাঁর জবাব, ‘এটা সত্যি খুব স্পেশ্যাল এবং তৃপ্তিদায়ক। আজকে গোটা বিশ্ব যে জায়গায় দাঁড়িয়ে (করোনাকালে) সেখানে আমি ব্যক্তিগতভাবে কানে হাজির হতে পেরেছি, এই অভিজ্ঞতা চাক্ষুস করতে পেরেছি, সেটাই আমার বড় পাওনা। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মানুষজন যে আমার কাহিনির সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছেন সেটা দেখে ভালোলাগছে’।
চলতি বছর কানের ‘La Fabrique Cinéma de l’Institut Français'-এ জায়গা করে নেওয়া একমাত্র ভারতীয় চিত্রনাট্য সুমনের ‘একা’, এই বিরাট সাফল্যের পরেও পা মাটিতেই রাখছেন সুমন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় শিল্প বা সিনেমা একটা সার্বিক বিষয়। সেটার কোনও ভৌগোলিক সীমা বা গন্ডি হয় বলে আমি মনে করি না। এই উদ্যোগটার উদ্দেশ্যই হল তোমাকে গ্লোবার কমিউনিটির অংশ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, এবং প্রতি বছর একটি দেশ থেকে একটা মাত্রই ছবির চিত্রনাট্যই তাঁরা নির্বাচন করে থাকেন’।

৫৬ বছর বয়সী ডায়াবিটিক বিমা এজেন্টের (বিপ্লব) জীবনের একটা সপ্তাহের নানা ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ছবির গল্প। বিষয় ভাবনা নিয়ে সুমন সেন জানালেন, ‘২০১৩ সাল নাগাদ, ইস্তানবুলের তাকসিম স্কোয়ারে এরদম গুনদুজ (Erdum Gündüz) নামের এক ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন, এরপর সেটি গণআন্দোলনের রূপ নেয়। এই ঘটনা আমার উপর গভীরভাবে ছাপ ফেলেছিল, বলতে পারেন আমার ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র, বিপ্লবের মধ্যে আপনি এরদমের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাবেন। একজন মানুষের মনে জমতে থাকা সরকার বিরোধী রাগ, বিতৃষ্ণার আগুন কীভাবে গণআন্দোলনে পরিণত হয় এবং সেই বিক্ষোভের আগুন দেশ-কালের গণ্ডি পার করে ফেলে তাই এই ছবির উপজীব্য'। ‘সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম’ ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ‘একা’র সঙ্গে।
'একা'র কাস্টিং এখনও চূড়ান্ত করেননি সুমন। গত সাড়ে দিন বছর ধরে এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। সুমনের বিপ্লব হিসাবে কাকে দেখা যাবে তা ফাঁস না করলেও, পরিচালক জানান, ভারতের কিছু সেরা চরিত্রাভিনেতার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তাঁর। এই ছবির অংশ হিসাবে বাংলাদেশি অভিনেতাদেরও দেখা যাবে। নতুন মুখেদেরও ছবিতে সুযোগ দিতে ইচ্ছুক পরিচালক, এর জন্য থাকবে নির্দিষ্ট অডিশন প্রক্রিয়া। চলতি বছরের শেষেই ছবির প্রি-প্রোডাকশনের কাজ শেষ করে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় শ্যুটিং শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সুমনের।