টলিগঞ্জের চেনা ছবিটা হয়ত আগামী কয়েকদিনে বদলে যাবে। লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন এই তিনটে শব্দ আর শোনা যাবে না টেকনিশিয়ান, ভারত লক্ষ্মী, এনটিওয়ান স্টুডিওয়। কারণটা অবশ্যই মহামারী করোনা। করোনার প্রভাব জাঁকিয়ে বসেছে ভারতের বিনোদন জগতে। ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে অনেক আগেই বহু ছবির শ্যুটিং বন্ধ রাখা হয়েছিল, তবে রবিবার রাতে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে আগমী ১৯ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলিউডে সব রকম শ্যুটিং বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিনেমা, সিরিয়াল এমনকি ওয়েব সিরিজের শ্যুটিংও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার্স প্রোডিউসার্স অ্যাশোশিয়েশনের (IMPPA) তরফে। সেই নোটিশের প্রতিলিপি এসে পৌঁছেছে ইস্ট ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাশোশিয়েশন (EIMPA)-এর হাতেও। এই নিয়ে শীঘ্রই জরুরি বৈঠকে বসবে ইম্পা, প্রোডিসার্স অ্যাশোশিয়েশন গিল্ড। সেখানে হাজির থাকবে আর্টিস্ট ফোরামের সদস্যরাও। সোমবার বিকালে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তবে শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গেল মিটিং। জানা গিয়েছে প্রোডিউসার্স অ্যাশোশিয়েশনের অনেক সদস্যই এখন শহরে নেই, তাই মিটিং পিছিয়ে দেওয়া হল।এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে IMPPA-র পদচিহ্ন অনুসরণ করে টলিগঞ্জেও সব ধরণের শ্যুটিং বন্ধ রাখা হবে কিনা। ইম্পার প্রেসিডেন্ট প্রিয়া সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ' আমরা সকলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। শীঘ্রই নতুন বৈঠকের তারিখ জানানো হবে। তবে হল বন্ধ থাকবে কিনা সেটা এক্সিবিটার্সদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল'।'ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিসিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া', সংক্ষেপে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘অল ইন্ডিয়া ফেডারেশনের তরফে জাতীয় ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে আমরা সব চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এবং ইম্পাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। আলোচনায় বসা হবে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে’।ইতিমধ্যেই ফিল্ম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি তথা প্রযোজক ফিরদৌস উল হাসান শ্যুটিং বাতিল করেছেন নিজের আসন্ন ছবি ডিকশানারির। ব্রাত্য বসু পরিচালিত এই ছবির শ্যুটিং চলছিল কলকাতায়, শান্তিনিকেতনেও ছবির বেশ কিছু অংশের শ্যুটিং বাকি। তবে করোনা কাঁটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াল শ্যুটিংয়ে। কলাকুশলীদের সুরক্ষাটাই সবচেয়ে জরুরি জানিয়েছেন প্রযোজক। বাতিল হয়েছে দেবের প্রথম বাংলাদেশি ছবি কম্যান্ডোর বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড শেডিউল। তবে লন্ডনে বাজির শ্যুটিং সারছেন মিমি-জিত। দক্ষিণ আফ্রিকায় কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তনের শ্যুটিং করছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। আজ বিকালের বৈঠকের দিকেই এখন নজর সকলের। কারণ সিনেমার শ্যুটিং বন্ধ হলে তাঁর প্রভাব এখনই খুব বেশি টের পাওয়া যাবে না। তবে সিরিয়ালের শ্যুটিং বন্ধ হওয়াটা বড় ধাক্কা হতে চলেছে -প্রযোজক থেকে শুরু করে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে। অধিকাংশ বাংলা সিরিয়ালই সপ্তাহে সাতদিন টেলিকাস্ট হয়। সিরিয়ালের খুব বেশি এপিসোড ব্যাঙ্কিংও করা থাকে না। তাই যদি ১২ দিন সত্যি বন্ধ হয়ে যায় শ্যুটিং তাহলে সিরিয়ালের নতুন এপিসোড সম্প্রচার করা কোনওভাবেই সম্ভবকর নয় চ্যানেরে পক্ষে। কী হবে তাঁদের পদক্ষেপ? পুরো বিষয়টাই নির্ভর করছে টলিগঞ্জের চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠনগুলির যৌথ বৈঠকের উপর।