সোমবারই হঠাৎ করে আরজি কর কাণ্ডে পথে নামা শিল্পীদের কটাক্ষ করে একটি পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ। আর তারপরই ম্যাজিকের মতো বদলে গেল মঞ্চে গান গাইতে আসা শিল্পীর মুখ। এমনটাই হল, লগ্নজিতা চক্রবর্তীর সঙ্গে। আর সেই জায়গায় ডাক পেলেন ‘চুপ থাকা’ নচিকেতা চক্রবর্তী।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে, চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মতো নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে বহু শিল্পী নেমেছিলেন অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পথে। প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন খোলাখুলি তাঁদের মধ্যে অনেকেই। নিঃসন্দেহেই তালিকায় ছিলেন লগ্নজিতা চক্রবর্তী। রাতের পর রাত জেগেছেন তিলোত্তমার সড়কে। সেই ‘শাস্তি’ কি পেলেন তাহলে?
মধ্য কলকাতার - কুল কোয়েস্ট কানির্ভালে ঘটেছে এই ঘটনা। সোমবার সেখানেই শিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তীর গানের অনুষ্ঠান ছিল। এমনকী, নাম ঘোষণা শুধু মৌখিকভাবে হয়নি। কার্নিভালের হোর্ডিং থেকে শুরু করে ফেসবুক পেজ, সর্বত্র সেই প্রচারও করা হয়...। এটির আয়োজক ছিলেন ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুপর্ণা দত্ত। তিনি নিজেও ফেসবুকে লগ্নজিতার নামই পোস্ট করেছিলেন।
কাকতালীয়ভাবে কুণালের পোস্ট আসার দিনই, লগ্নজিতার পরিবর্তে ঘোষণা হয়ে যায় নচিকেতার নাম। এমনকী, সেটাও ফেসবুকে পোস্ট করেন তৃণমূল কাউন্সিলর সুপর্ণা। যদিও এ অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের কাউন্সিলর থেকে মন্ত্রী কেউই।
কী লেখেন কুণাল সোশ্যাল মিডিয়াতে?
সোমবার একটি পোস্টে কুণাল ঘোষ লেখেন, ‘কিছু বাম, অতি বাম, অন্ধ তৃণমূল বিরোধী এই সময় (আরজি কর আন্দোলন) মিথ্যা, কুৎসা, ফেক অডিও, রাজনৈতিক নাটকবাজি করে মানুষের আবেগকে বিভ্রান্ত করে, একাংশের মিডিয়ার সাহায্যে, নিজেদের ধান্দায়। জঘন্য ভাষা, রোজ নাটক, সরকারের ইস্তফার দাবি, বাংলাদেশের সরকার বদলের সঙ্গে তুলনা চলছিল।’
তিনি এরপর আরও লেখেন, ‘এই প্রবল মিথ্যার ঝড় এবং আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী, আমরা দু-চারজন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সদস্যরা পাল্টা যুক্তি, ন্যায্য কথা ও জবাব নিয়ে সাধ্যমত লড়ে গিয়েছি। তাতে আমাদের ভয়ঙ্কর ব্যক্তি আক্রমণ ও বহু চোরাস্রোত সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, আমাদের দলের অনেক নেতা, নেত্রী, জনপ্রতিনিধি তখন নীরবে বসে জল মাপছিলেন। দলের সমর্থনে বা কুৎসার বিরুদ্ধে তাঁদের মুখে একটি কথা, এমনকি পোস্টও দেখা যায়নি। ইস্যুর ঝড়টা একটু কমে এলে এঁরা আবার জেগে উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিরে আসেন। তা আসুন। কিন্তু সমস্যা হল, এখন তাঁদের অনেকের মঞ্চে কিছু শিল্পী, এমনকি ডাক্তারকেও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ওই তিনমাস চূড়ান্তভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও সরকার বিরোধিতা করেছেন। কেউ রাস্তায়, কেউ টিভিতে। যে ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে সামিল, কোনো বিবৃতিও ছিল না পাল্টা, তাঁরা এখন নিজেদের তৃণমূল দেখাতে মরিয়া। যে শিল্পী 'চটিচাটা' বলে সরকারপন্থীদের আক্রমণ করতেন, এখন শীতের জলসার পোস্টারে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে তাঁর ছবি।’
সঙ্গে আরও লেখেন, ‘তিনমাস আগে 'চটিচাটা', সরকার ফেলে দেবো, বাংলাদেশের মত পালাবে বলা শিল্পীদের আর যাই হোক, এখন তৃণমূল নেতাদের বিনোদনের মঞ্চে ডাকা যেতে পারে না। ওঁরা ডাকলেই আসবেন। কিন্তু ওই কজনকে তৃণমূল কর্মীরা বয়কট করুন। এবার পাড়ার জলসায় ওই কজনের কোনো জায়গা থাকা উচিত না। তৃণমূলপন্থীদের অনুষ্ঠানে তো নয়ই।’