পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছে কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিসটেন্স ফ্রন্ট’-এর নাম। বিশেষ করে এই সংগঠনের একটি বিশেষ শাখা ‘ফ্যালকন স্কোয়াড’-এর তরফেই নাকি ঘটানো হয়েছে এই ঘটনা। কারা এই ‘ফ্যালকন স্কোয়াড’? কীভাবে কাজ করে এটি?
কয়েক বছর আগে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় এসেছিল এই স্কোয়াডের নাম। অমরনাথ যাত্রার সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করা হয়েছিল সরকারের তরফে। তখনই বার বার বলা হত, কাশ্মীরের ‘দ্য রেজিসটেন্স ফ্রন্ট’-এর বিশেষ শাখা এই ‘ফ্যালকন স্কোয়াড’-কে নিয়েই নাকি বেশি চাপ। কেন বলা হত সেটি?
আর পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন যেভাবে কাজ করে, সেভাবেই কাজ করে ‘দ্য রেজিসটেন্স ফ্রন্ট’। কিন্তু তার অধিনস্ত ‘ফ্যালকন স্কোয়াড’-এর কাজের ধরন একটু অন্য রকম। সেখানে যাদের নেওয়া হয়, সেই সব অল্পবয়সিদের ধরনধারণ সংগঠনটির বাকি সদস্যদের থেকে একটু আলাদা। আর সেই কারণেই এই বিশেষ স্কোয়াড বার বার চিন্তায় ফেলেছে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা, সেই সব মানুষকে।
কীভাবে ‘ফ্যালকন স্কোয়াড’-এর সদস্যদের বাছা হয়? বছর খানেক আগে সংবাদমাধ্যম এএনআই-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই স্কোয়াডের সদস্যদের বাছাই করার পদ্ধতি একটু আলাদা। সেই সময়ে কাশ্মীরের একটি দোকানে হামলা চালায় কয়েক জন যুবক। তাদের একজনকে ধরে পুলিশ। সেখান থেকেই জানা যায় এই ‘ফ্যালকনয়া স্কোয়াড’-এর কথা। যে যুবককে ধরা হয়েছিল, তার কোনও পুরনো অপরাধের রেকর্ড ছিল না। এমনকী পাড়াপ্রতিবেশীদের মধ্যেও তার ইমেজ ছিল পরিষ্কার। আর সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত পৌঁছোন গোয়েন্দারা। কোন সিদ্ধান্ত?
এই ‘ফ্যালকন স্কোয়াড’-এ এমন যুবকদেরই নেওয়া হয়, যাদের পুরনো কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই। তাদের বন্দুক চালানো শেখানো হয়। তারা বন্দুক হাতে অতর্কিতে আক্রমণ করে। এর পরে পালিয়ে গিয়ে আবার সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যায় আর সাধারণ জীবন কাটাতে থাকে। এই কারণেই এদের ধরা এত মুশকিল, চিহিন্ত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। এমনই মনে করেছিলেন গোয়েন্দারা।
সাধারণত ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের ছেলেদের এই শাখায় নেওয়া হয়। বেশির ভাগকেই আক্রমণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় অনলাইনে। তার পরে একটি বা দু’টি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের পরেই এরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়। আগের মতো করে সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের। ফলে তাদের খুঁজে পেতে গোয়েন্দাদের মুশকিল হয়।
এই ধরনের ‘ফ্যালকন স্কোয়াড’ই মঙ্গলবারে পহেলগাঁওয়ে হওয়া আক্রমণের পিছনে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাজপাখি যেভাবে অতর্কিতে আকাশ থেকে নেমে এসে শিকার করে, সেভাবেই নাকি এই স্কোয়াডের সদস্যরা আক্রমণ করে, সেখান থেকেই এই নামকরণ। যদিও বাজপাখি তো দূরের কথা স্থানীয়দের মতে, আসলে কাপুরুষের মতোই ‘নোংরা’ কায়দায় লুকিয়ে থেকে আক্রমণ করতে সেখানো হয় এই স্কোয়াডের সদস্যদের। আর সেই কারণেই তাদের নিশানায় কখনও গরিব দোকানদার, কখনও নিরস্ত্র কিছু পর্যটক।