আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে সবথেকে আগে যারা আন্দোলনের ঢেউ তুলেছিলেন তাঁরা হলেন জুনিয়র ডাক্তার। তাঁদের আন্দোলনের জেরে বার বার অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। দিনের পর দিন ধরে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না অবস্থানে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু তখন থেকেই প্রশ্ন উঠছিল এই যে ধর্না, অবস্থান আন্দোলন তার জন্য এত টাকা, এত বিপুল ফান্ড আসছে কোথা থেকে?
এদিকে ফান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই ওয়েবসাইট মুছে ফেলা হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল আন্দোলনকারী চিকিৎসক ফ্রন্টের কয়েকজনকে। কিন্তু তাঁরা হাজিরা এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে খবর।
তবে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গোটা বিষয়টি খোলসা করেছে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট। সত্যিই কি ওয়েবসাইটটি ইচ্ছাকৃতভাবে ডিলিট করা হয়েছে কি না তারও ব্যাখা দিয়েছেন জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট।
সোশ্য়াল মিডিয়ায় WBJDF-এর তরফে যা লেখা হয়েছে সেটা জেনে নিন..
'ডাঃ আশফাকুল্লা নাইয়ার পর আবারও জুনিয়র ডাক্তার দের বিরুদ্ধে পুলিশি অতি সক্রিয়তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন!
বিগত ৯ই ফেব্রুয়ারি ছিল আমাদের অভয়ার জন্মদিন। দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁর বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া চরমতম অন্যায়ের ও তার সুবিচার চেয়ে আন্দোলনের ছয়মাসও ওই একই দিনে ছিল। সেদিন আমরা সকলে অঙ্গীকার করেছি, তার ন্যায়বিচারের দাবিতে আমাদের এই লড়াই চালিয়ে যাবো। আন্দোলনের শুরুর দিন থেকে সমাজের সব স্তরের মানুষ আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ হেঁটেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং আন্দোলন ক্রমশ বৃহত্তর হতে থাকায় আমরাও সম্মিলিত ভাবে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিই। তা কার্যকরী হওয়ার অন্তর্বর্তী সময়ে বিভিন্ন কলেজের জুনিয়ার ডাক্তাররা নিজেদের মতো করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে কলেজের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, প্রাক্তনী ও পরিচিতদের থেকে আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করা শুরু করেন।
আপনাদের সবার সক্রিয় যোগদানে এই আন্দোলন এক প্রবল গণআন্দোলনের রূপ নেয়। তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে এবং পরবর্তী কালে WBJDF- এর অ্যাকাউন্টে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক অনুদান এসে পৌঁছয়। আমাদের স্মরণে আছেন সেই ঢাকি ভাই, আরও অজস্র ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ মানুষ যারা নিজেদের দিনের আয়ের প্রায় পুরোটা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন অভয়ার পাশে থাকার জন্য। আমরা তাদের হাত ধরে কথা দিয়েছিলাম, আমরা সেই হতভাগ্য মা বাবার হাত ধরে কথা দিয়েছিলাম আমরা তাদের কাছে উত্তর দিতে বাধ্য। তাদের সকলের কাছে সমস্ত টাকা পয়সার যাবতীয় হিসেব আমরা দেব। ইতিমধ্যে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট কে হিসেব দেওয়ার জন্যে একাউন্টিং ও অডিটিং এর কাজ চলছে।
আর সেই মানুষগুলি, যারা আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে দিগভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে যাবতীয় ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, কুৎসা রটাচ্ছেন, গোয়েবলসিয় কায়দায় বারবার মিথ্যা রটনা করেছেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই আমরা আপনাদেরও সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবো। আমাদের সাথে সাথে সাধারণ জনগণ আপনাদের এই সব প্রশ্নের উত্তর দেবে।
কিন্তু ইতিমধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পুলিশি হেনস্থা অব্যাহত। এক সপ্তাহ আগে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থেকে জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্যে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে পাঠানো হয়। তারা ইতিমধ্যে সকলেই অতিসক্রিয় এই তদন্তে সহযোগিতার জন্য সশরীরে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে হাজির হয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হল কোন অভিযোগের ভিত্তিতে বা কার অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সেই সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট বার বার চাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন এখনও দেননি। বলা হয়েছে কোনো একটি জেনারেল ডাইরির ভিত্তিতে নাকি এই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে সেই একইরকম ধোঁয়াশা পুলিশের তরফ থেকে বজায় রয়েছে।
পুলিশি প্রশ্নের ধরন মূলত এইটাই, যা টাকা তোলা হয়েছে তা এই স্টেজ বাঁধা, কনভেনশন এর ব্যবস্থাপনা করা, অভয়া ক্লিনিক এর ওষুধ কেনা, সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তার দের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উকিল দেওয়া ইত্যাদি কারণে কেন খরচ করা হয়েছে? এত তারিখে এত টাকা এই একাউন্টে পাঠানো হয়েছে কেন? ইত্যাদি প্রভৃতি। মূলত আর জি কর মেডিকেল কলেজ , মেডিকেল কলেজ কলকাতা, মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টরস এসোসিয়েশন এর ট্রেজারার, WBJDF এর একাউন্ট হোল্ডারদের সবাইকেই ডাকা হয়। কিন্তু কোন অভিযোগের ভিত্তিতে তা জানা নেই। আমাদের তরফ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্টই জানানো হয়েছে যে সব টাকার হিসেবে রয়েছে। একাউন্টিং ও অডিট এর কাজ চলছে। আর্থিক বর্ষের শেষে যথাসময়ে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট কে সমস্ত অডিট পেশ করা হবে।
এবার সমস্যা হল, গতকাল বিধান নগর থানায় হাজিরা দেওয়ার পর আবার কাউকে কাল রাত ১১টার সময়, কাউকে আজ সকালে টালা থানায় জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্যে ডাকা হয়। বলা বাহুল্য, ডিউটির মধ্যে হঠাৎ নোটিশ এ অনেকেই আজ উপস্থিত হতে পারেন নি। কিন্তু এই বিষয়টিকে একপ্রকার হেনস্থা হিসেবেই আমরা মনে করছি। বিভিন্ন থানা থেকে ডেকে একাউন্টের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ (কোনো অজানা জেনারেল ডায়রি কে ভিত্তি করে), তাও একদিনেরও কম নোটিশে একজন কর্মরত ডাক্তার কে তলব করে তাদের ব্যতিবস্ত করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য যাতে ভবিষ্যতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গেলে সবাই ভেবেচিন্তে আসে।
সমস্যাটা বোধ হয় অন্য জায়গায়। এই আন্দোলনের ফলে যাদের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে তারা এখন যেনতেন প্রকারে আন্দোলনের টুঁটি চেপে ধরতে চাইছে। তাই আক্রমণ আসছে পরিকল্পিতভাবে। একই সময়ে এক শ্রেণীর সাংবাদিক দের দিয়ে কিছু ’গুজব' ছড়ানো, কিছু মিথ্যে মামলা করে ভয় দেখানো, জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্থা করা, ভয়ের রাজনীতির কারবারি দের নিয়ে নতুন ডাক্তার সংগঠন খোলা সবই একটাই পরিকল্পনার অংশ।
অভয়ার ন্যায়বিচারের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই অর্থ সহায়তা করেছেন। সেই আন্দোলন অভয়ার ন্যায়বিচারের সাথে সাথেই স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি, কলেজে কলেজে শাসক দলের ভয়ের রাজনীতি, হুমকি সংস্কৃতি সব কিছুর বিরুদ্ধে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যেভাবে লড়াই হয়েছে তার প্রত্যেকটি অভয়ার ন্যায়বিচারের জন্য, আরেকটা অভয়ার মত নারকীয় ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্যে। ফলে আর্থিক সহায়তা সবটার জন্যেই। এই টাকার একটা সিংহভাগ অংশই খরচ হয় নি, সেই টাকা টা কীভাবে খরচ হবে সে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী/ নিয়মিত কোনো ক্লিনিক অভয়ার স্মৃতিতে তৈরি করা যায় কিনা সে নিয়েও আলোচনা চলছে। সে নিয়ে বাধাও আসছে যাতে এরকম কিছু আমরা না করতে পারি। কিন্তু তার মাঝেই আসলে এই বিতর্ক তৈরি করে চেষ্টা চলছে যাতে কোনো ভাবেই কোনো কাজে এই অর্থ ব্যবহার না করা যায়।
আরেকটি প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলে নয়, গতকাল থেকে এক শ্রেণীর মিডিয়া দ্বারা প্রচারিত একটি মিথ্যা 'খবর' আমাদের বিস্মিত করেছে। www.wbjdf.com ওয়েবসাইটটি নাকি আমাদের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং এও বলা হচ্ছে যে এই ওয়েবসাইট থেকে নাকি ক্রাউড ফান্ডিং করা হয়েছিল, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ এর পর নাকি ইচ্ছে করে এই ওয়েবসাইট টিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে চাই, ওই ওয়েবসাইটটি under process আছে, বিগত কিছু সপ্তাহ থেকেই সেটির testing চলছে। আমরা কখনোই অসম্পূর্ণ ওয়েবসাইটটি অফিসিয়ালি লঞ্চ করিনি। আমরা আমাদের যা বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে রাখার তা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম পেজ ও WhatsApp channel এর মাধ্যমেই রেখেছি। আমাদের ডিজিটাল উপস্থিতি বজায় রাখা বা বক্তব্য জানানো, আন্দোলনের আর্থিক সহায়তা চাওয়া সব ক্ষেত্রেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম পেজ ও হোয়াটস্যাপ চ্যানেল গুলোই ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলি সম্পূর্ণ ভাবে সক্রিয়। যে ওয়েবসাইট কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে সর্বসমক্ষে আনাই হয়নি সেটার 'বন্ধ' হয়ে যাওয়া নিয়ে এই মিথ্যাচার জনমানসে বিভ্রান্তি তৈরি ও আন্দোলন কে কালিমালিপ্ত করার একটা অপচেষ্টা বলেই আমরা মনে করছি।
কুৎসা রটানোর জন্য এও বলা হচ্ছে, ওয়েবসাইট বন্ধ করে নাকি সামাজিক মাধ্যম থেকে বিদায় নিয়েছে জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। কিন্তু কী আশ্চর্য, সেই সামাজিক মাধ্যমেই আমাদের পেজ থেকে এই বিবৃতি আমরা দিচ্ছি। এহেন মিথ্যাচার করে যারা আন্দোলন কে দমাতে চাইছেন তারা মনে রাখবেন, ন্যায়বিচারের যে লড়াই শুরু হয়েছে তা দীর্ঘজীবী হবে। লড়াই এর শেষ অবধি আমরা আছি, থাকব!
(আমাদের ওয়েবসাইটের লিঙ্কটি দেওয়া রইলো। পুরোপুরি তৈরী হয়ে গেলে আমরা আপনাদের কাছে ওয়েবসাইটটি ঘোষিত ভাবে নিয়ে আসব।)'
এরপরই ওয়েবসাইটের একটি লিঙ্ক তাঁদের পক্ষ থেকে সোশ্য়াল মিডিয়ায় দেওয়া হয়।