এই নয়া আইডেন্টিটি চালু হলে সরকার এবং উপভোক্তার সময় বাঁচবে। আর পরিষেবা প্রদানের প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। তাই কর্নাটক সরকারের ধাঁচেই নিজেদের তথ্যভান্ডার তৈরি করতে চাইছে নবান্ন। খাদ্যসাথীর তথ্যকেই আপাতত থামরুল ধরে এগোনো হবে। কারণ, রাজ্যে প্রায় ৮.৮৩ কোটি ডিজিটাল রেশন কার্ড রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বরাবরই সিএএ বা নাগরিকপঞ্জি আইন কার্যকর করার বিরোধিতা করে এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সব ব্যাপারে আধার সংযোগ চাওয়া, প্যানের সঙ্গে আধার সংযোগ–সহ নানা বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নিত্যনতুন নির্দেশে রাজ্যবাসী ক্লান্ত বলে মনে করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাই এবার রাজ্যের প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি করে নির্দিষ্ট পরিচিতি তৈরির পথে হাঁটতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বলে সূত্রের খবর। এই নয়া আইডেন্টিটির মাধ্যমে নানা সরকারি পরিষেবা প্রদানের পথ মসৃণ করা হবে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য ওই নির্দিষ্ট পরিচিতি পৃথক তথ্যভান্ডার তৈরিতে সাহায্য করবে। আধার কার্ডের সঙ্গে এই পৃথক পরিচিতির কোনও সংঘাত নেই বলে জানা গিয়েছে।
বিষয়টি ঠিক কেমন হবে? রাজ্যের সর্বত্র এই বিষয়ে সমীক্ষা চালানো হবে। তারপর পরিবারভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে। এখন আধার নম্বর দিয়ে পরীক্ষা করলে একজন ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য মেলে। আর এই নয়া আইডেন্টিটি থেকে একটি পরিবার সম্পর্কে জরুরি তথ্য মিলবে। এমনকী পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য, তাঁদের কে, কোন সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন বা পাচ্ছেন না–সহ নানা বিষয় নিয়ে ওই তথ্যভান্ডার গড়ে উঠবে। যে সমস্ত পরিবার একটি হলেও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নেয়, প্রাথমিক পর্যায়ে তাদেরই এই পরিচিতি দেওয়া হবে। এর বাইরেও কোনও পরিবার তা চাইলে তাদেরও দেবে রাজ্য সরকার বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
এতে লাভ কী হবে? সরকারি প্রকল্প পেতে আর কোনও নথির প্রয়োজন হবে না। এই নয়া আইডেন্টিটি দিলেই রাজ্যের সমস্ত কাজ দ্রুত সম্ভব হবে। এর মধ্যেই গোটা পরিবারের সকল সদস্যদের ডিটেইলস থাকবে। আধার–প্যান নম্বরও এখানে দেওয়াই থাকবে। মানুষকে আর ঝক্কি পোহাতে হবে না। কর্নাটকে ‘কুটুম্ব’ নামে এমনই একটি পদ্ধতি চালু আছে। এই নয়া আইডেন্টিটি চালু হলে সরকার এবং উপভোক্তার সময় বাঁচবে। আর পরিষেবা প্রদানের প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। তাই কর্নাটক সরকারের ধাঁচেই নিজেদের তথ্যভান্ডার তৈরি করতে চাইছে নবান্ন। খাদ্যসাথীর তথ্যকেই আপাতত থামরুল ধরে এগোনো হবে। কারণ, রাজ্যে প্রায় ৮.৮৩ কোটি ডিজিটাল রেশন কার্ড রয়েছে। তার মধ্যে আবার প্রায় ৮.৫৮ কোটি কার্ডের সঙ্গে আধার যুক্ত আছে।
আর কী জানা যাচ্ছে? জনগণনা হলে এই তথ্যভান্ডার কাজে লাগবে। সরকারি প্রকল্প পেতেও এটা কাজে আসবে। দুয়ারে সরকারের শিবির আয়োজন করতে খরচ হয় বেশ কয়েক কোটি টাকা। এই নয়া আইডেন্টিটি হয়ে গেলে সেই টাক বেঁচে যাবে। রাজ্য সরকারের বাজেট তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ আর্থিক বছরে সম্ভাব্য রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। অথচ খরচ বেড়েই চলেছে। মানুষকে সামাজিক প্রকল্প দিয়ে অনেকটা সুরাহা দেওয়া হয়েছে। আর সেটা দিয়েই যেতে চায় রাজ্য সরকার। তাই এই নয়া আইডেন্টিটি চালু করলে একদিকে যেমন খরচ বাঁচানো যাবে, অন্যদিকে মানুষকেও আরও বেশি করে সামাজিক প্রকল্প পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে খবর।