বাংলার বিভিন্ন জেলায় নদী ভাঙন বড় সমস্যা। বর্ষা এলেই নদী পার ভেঙে পড়ায় একের পর এক বাড়িঘর তলিয়ে যায় নদীগর্ভে। এর ফলে বহু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছে। আবার রাজ্য সরকারও এর জন্য দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রের কাছে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে কেন্দ্রের তরফে বারবার সহযোগিতা না করার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। এই অবস্থায় নদীগর্ভ থেকে পলিমাটি তুলে গভীরতা বজায় রাখার জন্য নয়া উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: নদী ভাঙন রুখতে মাস্টারপ্ল্যান রাজ্যের, জানালেন সেচমন্ত্রী মানস
বেসরকারি সংস্থাকে নদীর পলিমাটি বিক্রির বিষয়টি আগেই জানিয়েছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। সেই পরিকল্পনা মতোই কাজ করছে রাজ্য সরকার। তার জন্য দরপত্র ডাকা হবে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সংস্থা প্রতিটি কিউব বর্গমিটারে বেশি প্রিমিয়াম বা রয়্যাললটি দেবে তাদেরকে এই কাজের বরাত দেওয়া হবে। অর্থাৎ এবার নিজের খরচে আর রাজ্য সরকার ড্রেজিং করবে না। বেশ কয়েক মাস ধরে এ বিষয়ে আলোচনা চলছিল। এবার এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেচমন্ত্রী।
সাধারণত ভাঙনের সমস্যা দেখা দেয় মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। তবে সবচেয়ে বেশি নদী ভাঙন মূলত দেয় দেখা দেয় মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মালদার মানিকচক থেকে বৈষ্ণবনগর পর্যন্ত প্রতিবছর ভাঙনের সমস্যা হয়। এর ফলে প্রতি বছর ওই এলাকায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। আবার মুর্শিদাবাদের বিস্তৃর্ণ অংশেও এই সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া, পূর্ব বর্ধমান ও হুগলি জেলার কিছু অংশেও ভাঙনের সমস্যা রয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সেচমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরামর্শ মেনে তাঁর পরিকল্পনায় অনুযায়ী এই কাজ চলছে। প্রসঙ্গত, এবারের বাজেটে রাজ্য সরকার ‘নদীবন্ধন’ নামে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
তবে নতুন প্রকল্পের ফলে রাজ্যের কোষাগারে যেমন অর্থ আসবে, তেমনই একইসঙ্গে নদীর গভীরতাও বজায় রাখা যাবে। জানা গিয়েছে, এ বিষয়ে বীরভূম এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় জেলা প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। জানা যাচ্ছে, ড্রেজিংয়ে যে মাটি বা বালি উত্তোলন করা হবে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাই তা বিক্রি করবে। সেই অনুযায়ী, রাজ্যকে নির্দিষ্ট রাজস্ব দেবে সংস্থাগুলি।