প্রবীণ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে হেনস্থা, কলকাতা হাইকোর্ট ও সিটি সিভিল কোর্টের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ, আইনজীবীদের উদ্দেশ করে অশালীন আচরণ-সহ একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এবার কলকাতা হাইকোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করা হল। তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত শূন্যপদ (সুপারনিউমেরারি পদ) সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত না হলেও, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু রাজ্য সরকারের কাছে কয়েকটি বিষয়ে লিখিত জবাব চেয়েছিলেন। আদালত জানতে চেয়েছিল, কাদের জন্য এবং কেন ওই অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল গত শুক্রবার। ওই দিনই কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বার ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। কলকাতা হাইকোর্টের সামনে যেহেতু ১৪৪ ধারা জারি থাকে, তাই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের পরে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা সিটি সিভিল কোর্টের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেখানে আবার বিকাশরঞ্জনের দুই জুনিয়র ফিরদৌস শামিম এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্তের চেম্বার রয়েছে।
অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীন ফিরদৌসের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের একপ্রস্থ বাকবিতণ্ডাও হয়। অন্যদিকে, পরে বিকাশরঞ্জন বিক্ষোভস্থলে পৌঁছলে তাঁকে লক্ষ করে বিক্ষোভকারীরা চায়ের ভাঁড়, প্লাস্টিকের বোতল ছোড়েন বলেও অভিযোগ ওঠে। আইনজীবীদের জুতো দেখানোরও অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। যার জেরে বিকাশরঞ্জন সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেন, 'আইনজীবীরা লড়াই করছেন, আইন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পক্ষে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের লেলিয়ে দিচ্ছে শাসকদল। আমি বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। শুনলাম জুনিয়ররা বের হতে পারছেন না চেম্বার থেকে। ফিরে এলাম। মুক্ত করে নিয়ে যাচ্ছি। পরে আইনি পদক্ষেপ করব।'
এই ঘটনায় সোমবারই বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে মামলা দায়েরের অনুমতি চান কয়েকজন আইনজীবী। প্রসঙ্গত, বিচারপতি বসুর বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্ট বিক্ষোভকারীরা আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। সোমবার বিচারপতি বসু বলেছিলেন, এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু, যেহেতু গোটা বিষয়টি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের নজরে ছিল, তাই তিনি আজ (মঙ্গলবার - ২৯ এপ্রিল, ২০২৫) আবারও আদালতের দ্বারস্থ হতে বলেন আবেদনকারীদের।
অন্যদিকে, এই বিষয়ে মামলা রুজু করতে চেয়ে সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বার অ্য়াসোসিয়েশনের কয়েকজন আইনজীবী। আদালত সেই অনুমতি দিয়েছে। এক্ষেত্রে আদালত অবমাননার মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, 'প্রথমত আদালত এবং বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন কোনও আচরণ করা যায় না। রায় পছন্দ না হলে উচ্চতর আদালতে আবেদন করুন। এভাবে বিক্ষোভ দেখাবেন কেন? স্পষ্ট ভাষায় বলছি, এই কাজ করা যায় না। এঁদের সকলকে চিহ্নিত করতে হবে।'
আদালত সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই মামলার শুনানি করবে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বিশেষ বেঞ্চ। মঙ্গলবারই এই নয়া বেঞ্চ গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।