চাকরিহারা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না বলে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এফআইআরে নাম থাকলেও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করা যাবে না এবং শিক্ষা দফতরের পাঠানো শোকজ নোটিশও আপাতত কার্যকর হবে না। এই রায়ের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বহু চাকরিহারা শিক্ষক–শিক্ষিকারা। কিন্তু ঠিক তখনই রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। ওই মামলাতে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে আজ আন্দোলনকারীদের ‘হুলিগান’ বলে সম্বোধন করেছেন রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই মন্তব্য নিয়েই এখন বিতর্ক চরমে উঠেছে। এটা নিঃসন্দেহে সঠিক যে, শিক্ষকদের আন্দোলন রণক্ষেত্রের চেহারা তৈরি করেছিল। তাতে বিকাশ ভবনের কর্মীরা নাকাল হয়েছিলেন। বিধাননগর পৌরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তকে ঘেরাও করা হয়েছিল। এমনকী পুলিশের উপর আক্রমণ নেমে এসেছিল। যার জেরেই পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। তা বলে শিক্ষকদের ‘হুলিগান’ বা গুন্ডা বলা কতটা সমীচীন তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য–রাজনীতিতে। আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই হুলিগানদের জন্যই স্তব্ধ হয়ে পড়েছে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল, ভিজিল্যান্স কমিশন এবং এসবিআইয়ের শাখা অফিস।’
আরও পড়ুন: বাস চালকের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে দুঃসাহসিক ডাকাতি, ভরদুপুরে মেদিনীপুরে আলোড়ন
এই ঘটনার পরই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—যাঁরা চাকরি হারিয়ে আন্দোলন করছেন তাঁদের কেমন করে গুন্ডা বলা যায়? কল্যাণে বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকারের ভুলে চাকরি গেল। আর আমাদেরই হুলিগান বলছেন?’ নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে এসএসসি’র ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে চাকরিহারা হন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী। গত ১৪ তারিখ গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি’র কর্মীদের জন্য ভাতার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। তার বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। তারপরই গত ১৫ মে বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন তীব্রতর করেন চাকরিহারারা। বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ঢুকে যান তাঁরা বলে অভিযোগ।
এইসব কারণেই আন্দোলনকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকেও একাংশ শিক্ষককে শোকজ করা হয়। তখন মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, ‘সুখ–স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে আমরা আজ রাস্তায়। মাথার ছাদ ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে রাস্তায় বসেছি অধিকার আদায়ের জন্য। অথচ আমাদেরই বলা হচ্ছে হুলিগান! যাঁদের পড়িয়ে মানুষ করেছি, তাঁদেরই আমরা কি এই বার্তা দিচ্ছি যে শিক্ষক হওয়া মানেই অপমানিত হওয়া? এটা কেমন সমাজ? যদি কেউ গুন্ডা হয়, তাহলে সেটা তো প্রশাসনের আচরণে স্পষ্ট। আমরা তো কারও গায়ে হাত দিইনি। আমাদেরই হুলিগান বলা হচ্ছে।’ পাল্টা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েক কথায়, ‘যেখানে হুলিগান বলার, সেখানে হুলিগান বলতে হবে। ১৫ মে যা হয়েছে, সেটাকে আপনি কী বলবেন? অফিসে ভাঙচুর, চেয়ার ছোড়া, এসব কি হুলিগানিজম নয়?’