ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে সোমবার কলকাতায় বিজয় দিবস উদযাপনে অংশ নিতে ভারতে আসা মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান প্রাক্তন সেনারা এবং প্রতিবেশী দেশের কর্মরত সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আন্তরিক এবং জনগণের একটি অংশের দ্বারা বিরূপ বক্তব্য এতে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
বাংলাদেশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখনও সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং সেই সম্পর্কই থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের প্রশংসা করি আমরা। আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ভারতের জনগণের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেয়েছি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৩তম বার্ষিকীতে উদযাপনে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতায় এসেছে। ভারতীয় একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় গিয়েছে।
বাংলাদেশের নেতাদের একাংশ প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী যে বক্তব্য করছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বছরও আমরা একই আতিথেয়তা পেয়েছি। আমি যাঁদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং আলাপচারিতা করেছি তারা সবাই খুব ভালো ছিলেন। এ ধরনের বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। কে বিবৃতি দিচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল ভালো সম্পর্ক।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে এবং বাংলাদেশকে (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) মুক্ত করে। ১৩ দিনের যুদ্ধে তিন হাজারেরও বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল। প্রায় ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য ভারতীয় বাহিনীর সামনে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহত্তম সামরিক আত্মসমর্পণ বলে চিহ্নিত করা হয়। দিনটি 'বিজয় দিবস' হিসাবে পালিত হয়।
তিনি বলেন, 'কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আছে। তারা এখানে (ভারতে) এবং ওখানে (বাংলাদেশে) গল্প তৈরি করে। আসল কাহিনি একেবারেই ভিন্ন। এটাই আমার উপলব্ধি। মানুষ ভাবছে, সব ভুল হয়ে গেছে। তাহলে আমরা কীভাবে ভারতে এলাম এবং ভারতীয় দল কীভাবে বাংলাদেশে গেল? এই সম্পর্ক শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, দুই দেশের মানুষের মধ্যেও থাকবে। এটা চিরস্থায়ী। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ইস্টার্ন আর্মি কমান্ডের হেডকোয়ার্টার বিজয় স্মারকে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, 'এটা কোনো সস্তা সম্পর্ক নয়।
প্রতি বছর এই দিনে বিজয় দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধা, কর্মরত সামরিক কর্মকর্তা ও যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধি দল ভারতে আসেন। প্রাথমিক কিছু অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
প্রতিনিধি দলের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে হিংসা থাকতে পারে। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এভাবে চিন্তা করে না। ৯৯.৯ শতাংশ বাংলাদেশি নাগরিক মনে করেন ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমরা একাধিক ফ্রন্টে ভারতের উপর নির্ভরশীল। যেসব রিপোর্ট এসেছে তা সব সময় সঠিক হয় না।