অয়ন মণ্ডল খুনের ঘটনায় নয়া মোড় নিয়েছে। হরিদেবপুরে অয়ন মণ্ডল খুনে পরতে পরতে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। আর ততই পুলিশের কপালে ভাঁজ পড়েছে। গোটা খুনের নীল নকশা ছিল অয়ন মণ্ডলের বান্ধবীর মায়ের বলে সূত্রের খবর। এমনকী তারপর কীভাবে দেহ লোপাট করা হবে—তার পরিকল্পনা সাজিয়ে দেন বান্ধবীর বাবা। দফায় দফায় জেরায় এই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আগেই বান্ধবী ও তাঁর মা–ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জেরা করেই মেলে জড়িত আরও অনেকে। তখন বাবা এবং আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ওড়িশার জাজপুর থেকে অয়নের বান্ধবীর ভাইয়ের এই বন্ধুকে আজ গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুলিশ।
কোন তথ্য পুরোপুরি মিলে গেল? আগেই অয়নের বাবা অমর মণ্ডল দাবি করেছিলেন, মা–মেয়ে, দু’জনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক ছিল তাঁর ছেলে অয়নের। এবার সেই দাবি করছে পুলিশও। তদন্তে নেমে পুলিশ ত্রিকোণ প্রেমের তথ্য হাতে পেয়েছে। আর এই ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরেই খুন হয়েছেন অয়ন মণ্ডল বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। বিজয়া দশমীর রাতে অয়ন মণ্ডলকে বাড়িতে ডেকে ইট, বাঁশ–রড দিয়ে মারধর করে খুন করা হয়। মেয়ের সঙ্গে আট বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল অয়নের। একদিন মেয়ে বাড়ি না থাকা অবস্থায় সেখানে পৌঁছয় অয়ন। তখন অয়নকে বাড়িতে ঢুকিয়ে জড়িয়ে ধরেন বান্ধবীর মা রিমা জানা। আর বলেন, এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে কেন? কেউ জানতে পারবে না। এগিয়ে এসো অয়ন। তারপর থেকেই বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর প্রীতি বাড়িতে না থাকলে সেখানে যেত অয়ন। আবার প্রীতির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলত অয়ন।
ঠিক কী পরিকল্পনা করা হয়? খুনের পর অয়নের দেহ লোপাটের বুদ্ধি দেয় বান্ধবীর বাবা। তারপর দুই বন্ধুকে ডেকে পাশের নির্মীয়মাণ বহুতল থেকে ত্রিপল নিয়ে আসা হয়। সেটা দিয়ে মোড়া হয় অয়নের দেহ। তারপর পণ্যবাহী গাড়ি ভাড়া করে হরিদেবপুর থেকে মগরাহাটে নিয়ে যাওয়া হয় অয়নের মৃতদেহ। মৃতদেহ লোপাটের সঙ্গে সঙ্গেই অয়নের মোবাইল সুইচড অফ করে ফেলা হয় জলে। আর এই খুন করে ওড়িশায় আত্মীয়ের বাড়িতে গা–ঢাকা দেয় নিহতের বান্ধবীর ভাইয়ের এক বন্ধু। যাকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে।
আর কী জানা যাচ্ছে? হরিদেবপুরের খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অয়নের বান্ধবী–সহ ৭ জনকে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে বান্ধবীর ভাইয়ের দুই বন্ধু ও এক গাড়িচালক। ওই রাতেই বান্ধবী প্রীতির সঙ্গে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন মা রিমা জানা। মায়ের সঙ্গেও অয়নের সম্পর্কও ছিল। তাই এই দৃশ্য তিনি মেনে নিতে পারেননি। তখন ভাইকে ডেকে আনেন মা। তারপর ভাই তার বন্ধুদের ডেকে গোটা অপারেশনটি চালায় বলে উল্লেখ রয়েছে পুলিশের রিপোর্টে। শুক্রবার রাতে হরিদেবপুরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় অয়নের মৃতদেহ। পুলিশের আশ্বাসে দেহ নিয়ে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন মৃতের আত্মীয়রা। মাঝরাতে কেওড়াতলা শ্মশানে অয়নের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।