তখন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। আর রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় তখন আসীন বামফ্রন্ট সরকার। ২০১০ সালে কেন্দ্রে তখন ইউপিএ–২ সরকার চলছে। আর তখনই বাংলার বুকে ঘটে গিয়েছিল দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। যা রাজ্য–রাজনীতি এবং জাতীয় রাজনীতিতে শিহরণ জাগিয়ে তুলেছিল। আর সেটাই ছিল বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গড়ে ওঠার টার্ণিং পয়েন্ট। হ্যাঁ, নন্দীগ্রাম–নেতাইয়ের গণহত্যা তখন বড় আকার ধারণ করেছিল। গোটা বাংলা উত্তাল হয়ে উঠেছিল খুন ও রাজনৈতিক হত্যা নিয়ে।
তখন রাজ্যের নানা স্তরের মানুষজন সোচ্চার হয়েছিলেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে। নন্দীগ্রাম–নেতাই তখন জ্বলন্ত ইস্যু। সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে ইমেল করে সাক্ষাৎ করার সময় চেয়েছিলেন বাংলার বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্টজনরা। আর সেই সাক্ষাতের ‘নিশ্চয়তা’ পেয়েই কলকাতা থেকে রওনা হয়েছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু, অর্পিতা ঘোষ, শাঁওলি মিত্র, অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন–সহ কয়েকজন। প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ২৫ মিনিট কথা হয় তাঁদের। ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সেই স্মৃতি উসকে উঠল এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মনে। কারণ না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
আরও পড়ুন: বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত শুরু করল ইউনুস সরকার, আবার কাঠগড়ায় শেখ হাসিনা
এই প্রয়াণে সেই স্মৃতিই সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরেছেন অর্পিতা ঘোষ, ব্রাত্য বসুরা। এই বিষয়ে অর্পিতা ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা ৭, রেসকোর্সে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকলাম। আমরা অবাক হলাম ওনার ধৈর্য্য এবং বিনয় দেখে। আমাদের কথা পুরোটা শুনলেন। সব শুনে বলেছিলেন, ইটস রিয়েলি স্যাড। বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করলেন। অত্যন্ত মিতভাষী এবং নিরহঙ্কার একজন ভদ্রলোক। ওই বাড়িতে বসে আমাদের কখনও মনে হয়নি যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি আমরা।’
এখন যিনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তখন ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব। হ্যাঁ, তিনি ব্রাত্য বসু। অতীত স্মৃতি তিনিও স্মরণ করলেন। নন্দীগ্রাম, নেতাই গণহত্যার বিষয় নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সামনে হাজির ছিলেন তিনি। তাই প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথা স্মরণ করে সংবাদমাধ্যমে ব্রাত্য বসু বললেন, ‘আমরা নন্দীগ্রাম–নেতাই এবং সেই সময় রাজ্যজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সে বিষয়ে জানাতে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আমরা দেখা করি রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমের সঙ্গেও। মনে আছে, উনি পুরো সময়টা আমাদের কথা শুনেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সবটা বলবেন বলেও জানিয়েছিলেন।’