মাস্ক না পরার দায়ে পুলিশের লাঠির ঘা–ও খেতে হয়েছে অনেকে। দিতে হয়েছে জরিমানা। কিন্তু ইদানিং মাস্ক পরা বা না পরা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই পুলিশের। বিগত কয়েক মাসে মাস্ক না পরায় কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতারির সংখ্যা থেকেই মিলেছে তার প্রমাণ।
আর ৫ দিন পরেই শুরু বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চরচর করে বাড়ছে উৎসবের আমেজ। একইসঙ্গে কলকাতা–সহ সারা পশ্চিমবঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণও। যা রুখতে মাস্ক–ই অন্যতম ভ্যাকসিন বলে দাবি চিকিৎসকদের। কিন্তু কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে নিয়মকানুন কিছুটি শিথিল করেছে কলকাতা পুলিশ। মাস্কহীন লোকজনের ওপর নজরদারিও কমে গিয়েছে।
অগস্ট বা সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন মাস্ক না পরার দায়ে কলকাতায় যত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল অক্টোবরে উৎসবের মরশুম শুরু হতেই সেই সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে। প্রকাশ্যে মাস্ক না পরায় ৫ অক্টোবর ও ১১ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ওই একই সময় অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ জন মাস্কহীন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। তার মধ্যে আবার দু’দিন লকডাউন ছিল, ৭ সেপ্টেম্বর ও ১১ সেপ্টেম্বর, শুধুমাত্র এই দু’দিনই যথাক্রমে ৫২৫ ও ৪৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অগস্টের ৫ থেকে ১১ তারিখ প্রতিদিন মাস্ক না পরায় গ্রেফতার হতে হয়েছে গড়ে ৪১০ জনকে।
কিন্তু এই উৎসবের মরশুমে দিনের পর দিন মাস্কহীন ব্যক্তিদের ধরপাকড় কমছে কেন? উত্তরে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিনহা সরকার বলেন, ‘আমরা ব্যাপারটি খতিয়ে দেখছি।’
গত ১ মাসে কলকাতায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। উৎসবের মরশুমে কলকাতার পুলিশ–প্রশাসনের মাস্ক না পরা নিয়ে এই গা–ছাড়া ভাব বিপজ্জনক হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। যেখানে ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিকিৎসকদের তরফে সাবধান করা হয়েছে যে পুজো উপলক্ষে সব কিছুতে যেভাবে ছাড় দেওয়া হচ্ছে তাতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বেড়ে যেতে পারে। তাঁরা উল্লেখ করেছেন ওনাম উৎসবের পর কেরলের করোনা–দশার কথাও।
এক সরকারি শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘যেখানে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় অন্যান্য রাজ্যে লোকজনকে মারধর করা হয়েছে সেই তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনেকাংশে মানবিক পদক্ষেপ করেছে। মাস্ক পরতে এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে লোকজনকে রীতিমতো অনুরোধ করে বলা হচ্ছে। আর উৎসবের মরশুমের জেরেই মাস্ক না পরা বা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করার দায়ে গ্রেফতারির সংখ্যা কমেছে।’