‘আর নয় অন্যায়, আর নয় বেকারত্ব’— এই স্লোগান তুলে রবিবার থেকে নতুন কর্মসূচির সূচনা করল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি। এদিন হেস্টিংসে দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচির সূচনায় বেকারত্ব ইস্যু নিয়ে রাজ্য সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন বিজেপি–র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়। তাঁর কথায়, ‘রাজ্যবাসীকে চাকরির সুরক্ষা দিতে না পারলেও ২০ টাকার চোলাই মদ সরবরাহ করছে এই রাজ্য। ক্লাবে ক্লাবে অনুদানের নামে ঘুষ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। চপ শিল্পের মতো বোমা শিল্পও নির্বিঘ্নে বাড়ছে এই রাজ্যে।’
পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ১৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে বলে এদিন দাবি করেন মুকুল রায়। রাজ্য সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এদিন তিনি বলেন, ‘সিপিএম সরকার পশ্চিমবঙ্গের বুকে বেকারত্বের যে হাহাকারের সূচনা করেছিল তৃণমূল সরকার সেই পরিস্থিতিকেই এগিয়ে নিয়ে চলেছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার প্রায় ১৮ শতাংশ। এ রাজ্যের বন সহায়ক পদে আবেদন করে হাজার হাজার স্নাতকোত্তর ছেলেমেয়ে। অথচ ওই পদের জন্য কেবল অষ্টম শ্রেণি পাস প্রার্থী কাম্য। এ থেকেই বোঝা যায় যে রাজ্য সরকার কতটা ব্যর্থ।’
বেকার যুবকদের চপের দোকান দিতে উৎসাহ দিয়ে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীরা কটাক্ষ করে রাজ্যে ‘চপশিল্প’ নামে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার দাবিও জানায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন মুকুল রায়ের আক্রমণ, ‘পরিসংখ্যান বলছে, বাংলার যুব সমাজের মধ্যে এত আত্মহত্যার ঘটনার অন্যতম কারণ হল বেকারত্ব। অথচ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্থানের নামে বাংলার যুব সমাজকে চপ, ফুলুরির দোকান দিতে উৎসাহিত করছেন।’
প্রাক্তন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের অভিযোগ, ‘একদিকে যেমন কাজের সন্ধানে ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছে বাংলার ছেলেমেয়েরা, ওদিকে জনগণের উন্নয়নের জন্য পাঠানো কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজেদের উন্নয়ন করছেন তৃণমূল নেতারা। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘মুখ্যমন্ত্রী গত ৯ বছরে পাঁচটি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অধিবেশন করলেও আজ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কোনও শিল্পে বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়নি। উপরন্তু যে সকল বাণিজ্যিক সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে ছিল তারাও এখন তৃণমূলের শাসনকালে সিন্ডিকেটের কারণে রাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন যে ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত সে সকল টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী নিয়োগপত্র হাতে পাননি তাঁদের মধ্যে ১৬ হাজার ৫০০ জনকে চাকরি দেবেন। কিন্তু আদালত সেই নিয়োগপত্রই বাতিল করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে মুকুল রায়ের কটাক্ষ, ‘এবার মাননীয়া মিথ্যা চাকরির খুড়োর কল বানিয়ে ভোট টানবেন।’ এর পাশাপাশি বাংলার ২ লক্ষ বেকার যুবক–যুবতীদের মোটরবাইক কেনার জন্য ঋণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর ঘোষণায় এই ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর কোনও তারিখ জানানো হয়নি।
সিঙুর প্রসঙ্গ টেনে এদিন মুকুল রায় বলেন, ‘সিঙুর থেকে টাটা গোষ্ঠীকে সরিয়ে দিয়ে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙুরের লোকজনকে কথা দিয়েছিলেন যে চাষ–আবাদের ব্যবস্থা করে সেখানকার যুব সমাজকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন, সেখানে আজ পর্যন্ত সিঙ্গুরে কারও চাকরির ব্যবস্থা হয়নি।’
এর আগও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব–সহ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রাজ্যের আমলা, পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের শাসকদলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন। এদিন একই অভিযোগ তুলে বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, ‘যে কোনও রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেখানকার আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অনুকূল হওয়া উচিত। কিন্তু এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পুলিশ–প্রশাসনকে হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছেন। যে পুলিশের কর্তব্য সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া তারাই এখন তৃণমূলের পেটোয়া হিসেবে কাজ করছে।’