মালদার দাপুটে তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনে গ্রেফতার হয়েছেন সাতজন। তার মধ্য়ে অন্য়তম নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। তিনিও ইংরেজবাজারের তৃণমূল নেতা। একেবারে শহর তৃণমূল সভাপতি। সেই নরেন্দ্রকে এই খুনের মূল চক্রী বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
দুলাল সরকার আর নরেন্দ্রনাথের মধ্যে বিরোধটা ঠিক কী ছিল?
তবে পুলিশ এখনও সরাসরি খুনের মোটিভ কিছু জানাতে পারেনি।
তবে মালদায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে নরেন্দ্র আর বাবলা সরকারের মধ্য়ে পুরনো শত্রুতার কথা। কার্যত ক্ষমতার রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে দুপক্ষের মধ্য়ে রেষারেষি ছিল ভয়াবহ। এমনটাই মত অনেকের।
তবে এই রেষারেষির সূত্রপাত ঠিক কোথায়?
বিগত দিনে দুলালকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করতে কোণঠাসা করতে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি নরেন্দ্র। একই দলে থেকেও যেন একেবারে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। একটা সময় দুলালের বিরুদ্ধে নির্দল দাঁড় করি দুলালের যাত্রাভঙ্গ করার চেষ্টার নেপথ্যে যে মানুষটি ছিলেন তিনি আর কেউ নন, এই নরেন্দ্র তিওয়ারি। এদিকে ২০২২ সালের পুরভোটে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে যখন নরেন্দ্রর স্ত্রী প্রার্থী হয়েছিলেন তখন আবার দুলাল সরকার পাশের ওয়ার্ডের সেই প্রার্থীকে পরাস্ত করতে একেবারে উঠেপড়ে লেগেছিলেন বলে খবর। এই ঝগড়ার কথা দলের অনেকেরই জানা। পুর চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী সরাসরি এই ঝগড়ার প্রসঙ্গ অস্বীকার করেননি সংবাদমাধ্যমের সামনে।
আবার নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগও উঠেছিল দুলালের বিরুদ্ধে। আসলে কে কতটা এগিয়ে যাবে তার একেবারে কঠিন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালের পুরভোটের পরে নন্দুর অনুগামীদের সঙ্গে বাবলা সরকারের লোকজনের মারপিটও হয়েছিল বলে খবর।
দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি সরকার সংবাদমাধ্য়মে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ভোটের সময়ও তারা চেষ্টা করেছিল, আমরা অনেক জায়গা থেকে শুনতে পেয়েছিলাম । এতদিন ধরে রাগ পুষে রেখে যে এটা করবে সেটাও হতে পারে।
আসলে এলাকা দখলের লড়াই। কার হাতে থাকবে রাজনীতির রাশ। একসময়ের দুই বন্ধুর মধ্যে তৈরি হয়েছিল আড়াআড়ি ফাটল। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি রাজনৈতিক জমিও ছাড়তে চায়নি। তবে কি দুলালের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে পেরে উঠতে না পেরেই তাকে নিকেশ করার পরিকল্পনা?
এদিকে কিছুদিনের মধ্য়েই দুলালের পদ আরও বৃদ্ধি পেত বলেও দলের অন্দরে চর্চা হচ্ছিল। তার আগেই সব শেষ।
এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার ভবানী ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, '৫জনকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এদেরকে জেরা করে একটি সূত্র পাওয়া যায়। তার উপর ভিত্তি করে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি আর স্বপন শর্মা তাদের দুজনকে এসপির নেতৃত্বের রাতভর জেরা করা হয়। এরপর সকালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। …স্বপন শর্মা একজন কুখ্য়াত দুষ্কৃতী। তার বিরুদ্ধে অতীতে খুন, বোমাবাজির মতো অভিযোগ রয়েছে। পুরনো মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্বপন শর্মা ও নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি এই খুনের মূল চক্রী। ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে একটা সুপারি কিলিংয়ের বরাত দেওয়া হয়েছিল।