বেলগাছিয়ার ভাগাড় বিপর্যয়ের খেসারত দিতে হচ্ছে সমগ্র হাওড়া শহরের বাসিন্দাদের। ক্রমশ ধসে পড়া বেলগাছিয়া ভাগাড়ে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু, তার পরিবর্তে কোথায় সেই আবর্জনা ফেলা হবে, তা বলা হয়নি। ফলত, শহরের সর্বত্র ভ্যাট উপচে পড়ছে। রাস্তার পাশে, নর্দমার ধারে এই দু'দিনের মধ্যেই আবর্জনার স্তূপ জমা হয়ে গিয়েছে। গন্ধে টিকতে পারছেন না বাসিন্দারা। হাঁটাচলা করতে হচ্ছে সেই আবর্জনার মধ্য়ে দিয়েই। সব মিলিয়ে কার্যত 'নরক যন্ত্রণা' ভোগ করতে হচ্ছে হাওড়া শহরের বাসিন্দাদের।
অন্যদিকে, এই বিপর্যয়ে সবথেকে বেশি যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বেলগাছিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ড সংলগ্ন এলাকার সেই বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে রেড ক্রস-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখা। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ, ২০২৫) তাদের প্রতিনিধিরা এলাকা পরিদর্শনে আসেন। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। এবং সংস্থার রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যপালকে এ নিয়ে নিজেদের রিপোর্ট পেশ করবেন বলে জানান।
এদিকে, মঙ্গলবার চ্যাটার্জি হাট থেকে শুরু করে রামরাজাতলা, জগাছা, কালীবাবুর বাজার-সহ হাওড়ার সর্বত্রই একই ছবি ধরা পড়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে, তাঁদের এলাকার আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি। ফলত, সেই আবর্জনা এবার পচতে শুরু করেছে। পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিনই হাওড়ার ভাগাড় সমস্যা মেটাতে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে শহরের পুর প্রশাসনের। হাওড়াবাসীর আশা, এই বৈঠকেই হয়তো সমস্যার স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাবে। এছাড়াও, এদিন সকালে স্থানীয় একটি ক্লাবে একই বিষয় নিয়ে এবং কীভাবে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে একটি বৈঠক হয় বলে জানা গিয়েছে। সেই বৈঠকে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্গত বাসিন্দাদের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সেই বৈঠকে বিপজ্জনক বাড়িগুলিতে থাকা বাসিন্দাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অন্যত্র যাওয়া ও থাকার বন্দোবস্ত সরকারের পক্ষ থেকেই করা হবে।
এর পাশাপাশি, রেড ক্রসের রাজ্য শাখার প্রতিনিধিদল এদিন ভাগাড় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁদের পক্ষ থেকে মন্দিরা চক্রবর্তী জানান, তাঁরা আক্রান্তদের পাশে থাকবেন।
মন্দিরা বলেন, ভাগাড় বিপর্যয়ের ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁরা ভয়ে বাড়িতে বাচ্চাদের ফেলে রেখে কাজে যেতে পারছেন না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খাচ্ছেন, পানীয় জল ব্যবহার করছেন। এর ফলে যাতে তাঁরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে রেড ক্রসের তরফে এলাকায় একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প করার কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি, মহিলাদের জন্য কিছু ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী এবং রোজের সংসারে ব্যবহৃত কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য যাতে এই পরিবারগুলিকে সরবরাহ করা যায়, সেই চেষ্টাও করা হবে।
মন্দিরা জানান, তাঁদের সংস্থার রাজ্য সভাপতি হলেন রাজ্যপাল। এদিন তাঁরা বেলগাছিয়ায় এসে যে পরিস্থিতি দেখেছেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট রাজ্যপালকে দেবেন। তারপর তাঁর নির্দেশ মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।