বছর চারেক আগের একটি ঘটনা। নদিয়ার হাঁসখালি থানা এলাকায় এক নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল গত পরশু (বুধবার - ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)। অথচ, শুনানি শুরু হতে না হতেই গোটা বিচারপ্রক্রিয়াটিই শেষ হয়ে গেল!
কারণ, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নাবালিকা নিগ্রহে মূল অভিযুক্ত সেই ব্যক্তিই আর ইহলোকে নেই! তিনি মারা গিয়েছেন প্রায় আড়াই মাস আগে! অথচ, সেই তথ্য আদালতকে জানানো হয়েছিল, না তদন্তকারী আধিকারিক সেই সম্পর্কে কিছু জানতেন!
এমন আজব ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ রানাঘাট মহকুমা আদালতের বিচারক সৌমেন গুপ্ত। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বিচারাধীন বন্দির মৃত্যু হলে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষেরই সেকথা আদালতকে জানানোর কথা। কিন্তু, এক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। উপরন্তু, ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিক পর্যন্ত আসামীর মারা যাওয়ার খবর জানতেন না!
সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপেশাদার আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই আচরণের জবাবদিহি চেয়েছেন বিচারক। দমদম সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব তলব করেছেন তিনি। একইসঙ্গে, এই ঘটনায় তাঁর কী বক্তব্য, তা জানাতে বলে জেল সুপারকে সশরীরে আদালতের এজলাসে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে নদিয়ার হাঁসখালি থানা এলাকায় এক নাবালিকার উপর যৌন অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন ধলুচাঁদ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এত দিন রানাঘাট পকসো আদালতে এই মামলা চলছিল।
কিন্তু ধলুচাঁদ মণ্ডল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে রানাঘাট উপ-সংশোধনাগার থেকে দমদম সংশোধনাগারে নিয়ে গিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এবং সেখানেই ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিচারাধীন ওই বন্দির মৃত্যু হয়।
এদিকে, মামলার শেষ শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছিল গত ২০ জানুয়ারি (২০২৫)। কিন্তু, ওই দিন এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক আদালতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
ওই দিন সময় মতোই আদালতে সাক্ষ্য দিতে পৌঁছে যান তদন্তকারী আধিকারিক। কিন্তু, শুনানি প্রক্রিয়া শুরু হতেই অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী জানিয়ে দেন, তাঁর মক্কেলের মৃত্যু হয়েছে! এবং সেটাও প্রায় আড়াই মাস হতে চলল!
একথা শুনে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান বিচারক। এরপরই তিনি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি তলব করেন।