রেল রোকো অথবা রেল অবরোধ নানা কারণে দেখে থাকে বাংলা–সহ দেশের অনেক রাজ্য। ট্রেনের ট্র্যাকে ঝান্ডা লাগিয়ে এবং বসে পড়ে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে নাকাল হতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসতে হয় রেলের অফিসারদের। তাঁরাও হেনস্থার মুখে পড়েন। এবার থেকে ট্রেনের চাকা আটকালে তার জন্য বড় অর্থদণ্ড চোকাতে হবে অবরোধকারীদের। ট্রেন অবরোধ ঠেকাতে এবার কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে ভারতীয় রেল বলে সূত্রের খবর।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মহলে। রেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ট্রেন অবরোধ এবার থেকে যাঁরা করবেন, তাঁদের চিহ্নিত করে আদালতে নিয়ে গিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে। সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার এবং মালদায় এমন দু’টি মামলায় ট্রেন অবরোধকারীদের থেকে ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে ভারতীয় রেল। লোকাল ট্রেনে মহিলা কামরার সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রতিবাদ দেখা যায় শিয়ালদা দক্ষিণ শাখায়। ট্রেন অবরোধের জেরে কয়েকদিন পূর্ব রেলকে বাতিল করতে হয়েছিল গড়ে ২০টি করে লোকাল ট্রেন।
আরও পড়ুন: ‘ইনভেস্টিগেশন সাপোর্ট ইউনিট’ গঠনের নির্দেশ দিলেন নগরপাল, কী কাজ এই টিমের?
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির প্রতিবাদে ধুলিয়ান গঙ্গা এবং আজিমগঞ্জ স্টেশনের মাঝে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছিল দু’দিন অবরোধের জেরে। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে ট্রেন অবরোধ করার পাশাপাশি ট্র্যাকের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এবং ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করার জেরে পুড়ে ছারখার হয় গোটা ট্রেন। আবার কোনও জায়গায় স্টেশন তৈরির দাবিতে অবরোধ–সহ নানা অজুহাতে অবরোধ দেখা গিয়েছে। সিএএ, এনআরসি’র প্রতিবাদেও ট্রেন অবরোধ করা হয়েছিল। রেলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে পূর্ব রেল, দক্ষিণ–পূর্ব রেল এবং উত্তর–পূর্ব সীমান্তে মোট ৭৮ দিন অবরোধ হয়েছে।
তাছাড়া এমন পরিস্থিতি বারবার তৈরি হলে তা সরাসরি আয়ের উপর কোপ পড়ে। ট্রেন অবরোধ হলে কেবল যাত্রীরা নাকাল হন তা নয়, বিপুল ক্ষতি হয় ট্রেন পরিষেবার। তবে সম্প্রতি রেল দু’টি পৃথক অবরোধের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আলিপুরদুয়ার এবং মালদা সিভিল কোর্টে। আর রেলের আইন অনুযায়ী, ট্রেন অবরোধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভূক্ত। রেল রক্ষীবাহিনী মামলা করেছে। আগামী দিনে ভারতীয় রেলের অন্যান্য জোনগুলিতেও এই পদক্ষেপ করা হবে অবরোধ করলে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক অফিসার বলেন, ‘এই অবরোধ ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এবার থেকে কোনও রাজনৈতিক দল অবরোধ করলে তার বিরুদ্ধেও ক্ষতিপূরণ মামলা করা হবে।’