আজ যদি কবি জীবিত থাকতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের তরফে তাঁকে যে 'জাতীয় কবি'র সম্মান প্রদান করা হয়েছিল, তা তিনি ফিরিয়ে দিতেন!
বাংলাদেশ ইস্যুতে মুখ খুলে সংবাদমাধ্যমে এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন পশ্চিম বর্ধমানের চুরুলিয়ার বাসিন্দা কাজী রেজাউল করিম। তিনি দুই বাংলারই গর্ব কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভ্রাতুষ্পুত্র।
বৃদ্ধ রেজাউল ও তাঁদের পরিবারের বহু সদস্যই আজও এপার বাংলার এই গ্রামে থেকে গিয়েছেন। যে গ্রামে জন্ম হয়েছিল স্বয়ং কবি কাজী নজরুল ইসলামের। তাঁর সেই বসত ভিটে আজও এখানে রয়েছে। তৈরি হয়েছে সংগ্রহশালা। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কবির স্মৃতিসৌধ রয়েছে। তিনি সেদেশের জাতীয় কবি (অন্তত এখনও পর্যন্ত)।
সংবাদমাধ্যমকে কবির ভাইপো জানিয়েছেন, কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানব ধর্ম পালনের কথা বলেছেন। সম্প্রীতির কথা বলেছেন। অথচ, আজ বাংলাদেশেৃ, যে দেশের তিনিই জাতীয় কবি, সেই মাটিতে হিন্দু নিধন হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন কাজী রেজাউল করিম। দৃঢ়তার সুরে তিনি বলেছেন, আজ যদি কবি জীবিত থাকতেন, তাহলে জাতীয় কবির উপাধি ও সম্মান বাংলাদেশকে ফেরত দিয়ে দিতেন।
একইসঙ্গে, রেজাউল জানিয়েছেন, তাঁরা এর আগে বাংলাদেশে গিয়েছেন। শেখ হাসিনার সরকার তাঁদের সম্মানিত পর্যন্ত করেছে। তাছাড়া, নজরুলের পরিবারের একাধিক সদস্য বাংলাদেশেও থাকেন। কিন্তু, তিনি আর ওদেশে যেতে চান না।
রেজাউলের বক্তব্য, যে দেশে মানুষে-মানুষে এমন ভেদাভেদ, হিন্দু হওয়ায় কিছু মানুষের উপর এমন অত্যাচার, সেদেশের মাটিতে তাঁরা আর পা রাখবেন না। তবে, যদি অত্যাচার, অনাচারের প্রতিবাদে সামিল হওয়ার ডাক আসে, তাহলে তিনি অবশ্যই সেই ডাকে সাড়া দেবেন। অশক্ত শরীর নিয়েই বাংলাদেশের সড়কে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে যোগ দেবেন।
প্রসঙ্গত, চুরুলিয়ার এই গ্রাম আজও নজরুলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সযত্নে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গ্রামের সর্বত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবি আজও অক্ষুণ্ণ।
মাস কয়েক আগেও বাংলাদেশের নজরুল গবেষকরা এখানে আসতেন। কিন্তু, এখন সেসবই বন্ধ। এমন পালাবদলে ব্যথিত বিদ্রোহী কবির পরিবারের সদস্যরা।
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে, কবির নাতনি সোনালি কাজীর গলাতেও। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, আজ বাংলাদেশের যে অবস্থা হয়েছে, কাজী নজরুল ইসলাম কখনও এমন বাংলাদেশ দেখতে চাননি।
তাঁর মতে, ওপার বাংলায় যেভাবে অত্য়াচার ও অনাচারের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে ধিক্কার জানানোর ভাষাটুকু পর্যন্ত খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।